12>आ =Post=12>***পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির***( 1 to 10 )
পুরীর উল্টোরথকে বলাহয় বাহুড়া যাত্রা।
জগন্নাথদেব রথে পদার্থণের অনুষ্ঠান কে
বলাহয় পাহান্ডি ।
1---------------পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির নানা অলৌকিক রহস্যে
2---------------পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির নানাঅলৌকিক রহস্যে ভরা . এখানে তা তুলেধরছিঃ
3----------------১. পুরাণ মতে, ৫১টি সতীপীঠ এর মধ্যে একটি সতীপীঠ জগন্নাথ মন্দিরে
আছে যার নাম বিমলা দেবী ।
4----------------১. জগ্ননাথের রথের নাম নন্দিঘোষ ।
5----------------১. প্রতিদিন অর্জুন জগন্নাথদেবের সাথে দেখা করতে আসতেন ।
6----------------আরও নানা বিচীত্র খবর -----
7----------------ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী মাহেশের রথযাত্রা...।
8-----------------দোল-দুর্গোৎসবের মত কলকাতার বনেদি বাড়িতে রথ নিয়েও নানা আচার- অনুষ্ঠান হয় ।
9>---------------জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা
10>|| দেহ রথ + শরীর রুপি রথ ||
************************************************
1>>পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির নানা অলৌকিক রহস্যে
পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির নানা অলৌকিক রহস্যে
জগন্নাথ পুরী মন্দিরের রান্নাঘরকে বলা হয় পৃথিবীর অদ্ভুত ও বড় রান্নাঘর । কেন এই রান্নাঘর অদ্ভুত তা
আপনাদের কাছে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরছি ।
পুরীতে আমরা কম বেশী সবাই যাই তাই তার রান্নাঘরের লীলা আমরা কম বেশি সবাই জানি । এখানে আরও
বিশদে আলোচনা করা হলো।
-----------------------------------------------------------------------------------
১. এই রান্নাঘরে বিবিধ দ্রব্য রান্না করার জন্য কোন বিদ্যুৎ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না । উন্মুক্ত কাঠের আগুনের উপর
অনেকগুলো তেলের ল্যাম্প বা বাতি ঝুলিয়ে রাখা হয় আর তার নিচেই সেবকরা এসেই রান্না কার্য সম্পন্ন করে ।
.২. এ রান্নাঘরে এত দ্রুত রান্না করা হয় যে শুধুমাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে একসাথে প্রায় দশ হাজার লোক বসে প্রসাদ পায় । আর এমনিতে পাঁচ হাজারের উপর দর্শনার্থী প্রসাদ পেয়ে থাকে ।
.৩. এই রান্নাঘরটি ৯টি ভাগে বিভক্ত । যাদের দুটি ভাগ ২৫০০ বর্গফুট করে এবং বাকি ৭টি ভাগ এ দুটির চেয়ে একটু ছোট হবে । এ রান্নাঘরে রয়েছে ৭৫২টি মাটির তৈরি চুলা যার প্রত্যেকটি দৈর্ঘ্যে তিন বর্গফুট করে এবং উচ্চতায় প্রায় ৪ ফুটেরও বেশি ।
.৪. চুলাগুলোতে একটির উপর একটি পাত্র বসানো হয় এভাবে প্রায় নয়টি পাত্র থাকে । শুধুমাত্র এ পাত্রগুলোর নিচে অবস্থিত আগুনের মাধ্যমেই উপরের পাত্র থেকে শুরু করে শেষে নিচের পাত্রটির রান্না অদ্ভুদ ভাবে সম্পন্ন হয় ।
এই রান্নাঘরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছে এক হাজার সেবক । তার মধ্যে ৫০০ সেবক রয়েছে কেবলমাত্রচুলাতে রান্না করার জন্য সহায়ককারী হিসেবে ।
.৫. এখানে কোন পুরাতন পাত্রে রান্না করা হয় না, প্রতিদিন নতুন নতুন পাত্রে রান্না করা হয়, তাই একদল খালি মাটি দিয়ে পাত্র বানায়, আরেক দল তা সরবরাহ করে রান্নাঘরে নিয়ে যায় । আরেকদল পাত্রগুলো ধৌত করে, আরেকদল পাত্রে জলভর্তি করে চুলাতে নিয়ে যায় |
.৬. রান্না করার জন্য এখানে গঙ্গা আর সরস্বতী নদী (এটা একটা রূপক, পাথর বাঁধানো জলের দুটি নালী, যা সারা দিন নদীর ন্যায় ক্রমাগত জল পরিবহন করে) রান্নাঘরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে যা বাহির থেকে দেখা যায় না যা সত্যিই অদ্ভুত !!!!
৭. কেউ কেউ সব্জি ধৌত করছে আর কেউ কেউ সব্জি কাটছে আর কেউ মসলা তৈরি করছে । রান্নাঘরে যে সেবকরা থাকে তাদের বয়স যখন ১২ বছর হয় তখন থেকে তারা ট্রেনিং এ নেমে পড়ে এভাবে তারা বংশানুক্রমে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট সেবা সারাজীবন ধরে অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত করে থাকে ।
.৮. এই রান্নাঘরে ১০০টির উপর আইটেম রান্না করা হয় যা দুটি ভাগে বিভক্ত । এ দুটি ভাগকে পাক্কা এবং সুক্কা নামে ডাকা হয় । পাক্কা বলা হয় সে খাবারগুলো যেগুলো সিদ্ধ করা যেমন ডাল, চাল, খিচুরী এবং সমস্ত রকমের সবজি ।
অপরদিকে সুক্কা বলা হয় বিস্কিট, মিষ্টান্ন আর বিভিন্ন ধরনের পিঠা ।
.৯. জগন্নাথের জন্য যেসমস্ত ফল ও সবজি ব্যবহার করা হয় সেগুলো দু হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ।
শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি ও ফলই জগন্নাথের জন্য ব্যবহৃত হয় । অন্য কোন অঞ্চল থেকে উৎপাদিত দ্রব্য জগন্নাথের জন্য ব্যবহার করা হয় না ।
.জগন্নাথ দেব আর লক্ষ্মী দেবীর কৃপায় ধন্য এই রান্না ঘর । তাইতো পুরীর এ রান্নাঘরকে অদ্ভুত রান্নাঘর বলেই অভিহিত করা হয় ।
===================================
2>পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির নানাঅলৌকিক রহস্যে ভরা . এখানে তা তুলেধরছিঃ
(1) এই মন্দিরের কোনো ছায়াপরে না।
(2) মন্দিরের চূড়ার পতাকাবায়ুর উল্টো দিকে ওড়ে।
(3) মন্দিরের উপর আজপযন্ত কোনো পাখি বসতেদেখা যায়নি।
(4) মন্দিরের ওপর দিয়ে কোনোবিমান,পাখি উড়ে যেতে পারে না।
(5) মন্দিরের সিংহ দ্বারেসমূদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শোনা যায়।
(6) মহাপ্রসাদ রান্না হয় পরপরসাতটি মাটির পাত্রে একসাথে(একটির উপরেআরেকটি বসানো হয়) কিন্তুরান্না হয় উপরেরহাঁড়িতে সবার প্রথমে।
(7) ভক্ত সংখ্যা কম বেশি হলেওপ্রসাদের কম বেশি হয় না।কেউই অভুক্ত থাকেননা।
(8)মন্দিরের রান্নাঘরের ভিতর দিয়ে গঙ্গানদীপ্রবাহমান,যা বাইরে থেকে দেখা যায় না।
===========================
পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির নানা অলৌকিক রহস্যে ভরা।
জগন্নাথ পুরী মন্দিরের রান্নাঘরকে বলা হয় পৃথিবীর অদ্ভুত ও বড় রান্নাঘর ।
কেন এই রান্নাঘর অদ্ভুত তা আপনাদের কাছে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরছি ।
পুরীতে আমরা কম বেশী সবাই যাই তাই তার রান্নাঘরের লীলা আমরা কম বেশি সবাই জানি ।
পুরীতে আমরা কম বেশী সবাই যাই তাই তার রান্নাঘরের লীলা আমরা কম বেশি সবাই জানি ।
এখানে আরও বিশদে আলোচনা করা হলো।...
১. এই রান্নাঘরে বিবিধ দ্রব্য রান্না করার জন্য কোন বিদ্যুৎ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না ।
১. এই রান্নাঘরে বিবিধ দ্রব্য রান্না করার জন্য কোন বিদ্যুৎ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না ।
উন্মুক্ত কাঠের আগুনের উপর অনেকগুলো তেলের ল্যাম্প বা বাতি ঝুলিয়ে রাখা হয়
আর তার নিচেই সেবকরা এসেই রান্না কার্য সম্পন্ন করে ।
.২. এ রান্নাঘরে এত দ্রুত রান্না করা হয় যে শুধুমাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে একসাথে
.২. এ রান্নাঘরে এত দ্রুত রান্না করা হয় যে শুধুমাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে একসাথে
প্রায় দশ হাজার লোক বসে প্রসাদ পায় ।
আর এমনিতে পাঁচ হাজারের উপর দর্শনার্থী প্রসাদ পেয়ে থাকে ।
.৩. এই রান্নাঘরটি ৯টি ভাগে বিভক্ত ।
.৩. এই রান্নাঘরটি ৯টি ভাগে বিভক্ত ।
যাদের দুটি ভাগ ২৫০০ বর্গফুট করে এবং বাকি ৭টি ভাগ এ দুটির চেয়ে একটু ছোট হবে ।
এ রান্নাঘরে রয়েছে ৭৫২টি মাটির তৈরি চুলা যার প্রত্যেকটি দৈর্ঘ্যে তিন বর্গফুট করে এবং
উচ্চতায় প্রায় ৪ ফুটেরও বেশি ।
.৪. চুলাগুলোতে একটির উপর একটি পাত্র বসানো হয় এভাবে প্রায় নয়টি পাত্র থাকে ।
.৪. চুলাগুলোতে একটির উপর একটি পাত্র বসানো হয় এভাবে প্রায় নয়টি পাত্র থাকে ।
শুধুমাত্র এ পাত্রগুলোর নিচে অবস্থিত আগুনের মাধ্যমেই উপরের পাত্র থেকে শুরু করে
শেষে নিচের পাত্রটির রান্না অদ্ভুদ ভাবে সম্পন্ন হয় ।
এই রান্নাঘরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছে এক হাজার সেবক ।
তার মধ্যে ৫০০ সেবক রয়েছে কেবলমাত্র চুলাতে রান্না করার জন্য সহায়ক কারী হিসেবে ।
.৫. এখানে কোন পুরাতন পাত্রে রান্না করা হয় না,
.৫. এখানে কোন পুরাতন পাত্রে রান্না করা হয় না,
প্রতিদিন নতুন নতুন পাত্রে রান্না করা হয়, তাই একদল খালি মাটি দিয়ে পাত্র বানায়,
আরেক দল তা সরবরাহ করে রান্নাঘরে নিয়ে যায় ।
আরেকদল পাত্রগুলো ধৌত করে, আরেকদল পাত্রে জলভর্তি করে চুলাতে নিয়ে যায় |
.৬. রান্না করার জন্য এখানে গঙ্গা আর সরস্বতী নদী
.৬. রান্না করার জন্য এখানে গঙ্গা আর সরস্বতী নদী
(এটা একটা রূপক, পাথর বাঁধানো জলের দুটি নালী, যা সারা দিন নদীর ন্যায় ক্রমাগত
জল পরিবহন করে) রান্নাঘরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে যা বাহির থেকে দেখা যায় না
যা সত্যিই অদ্ভুত !!!!
.৭. কেউ কেউ সব্জি ধৌত করছে আর কেউ কেউ সব্জি কাটছে আর কেউ মসলা তৈরি করছে । রান্নাঘরে যে সেবকরা থাকে তাদের বয়স যখন ১২ বছর হয় তখন থেকে তারা ট্রেনিং এ নেমে পড়ে এভাবে তারা বংশানুক্রমে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট সেবা সারাজীবন ধরে অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত করে থাকে ।
.৮. এই রান্নাঘরে ১০০টির উপর আইটেম রান্না করা হয় যা দুটি ভাগে বিভক্ত । এ দুটি ভাগকে পাক্কা এবং সুক্কা নামে ডাকা হয় । পাক্কা বলা হয় সে খাবারগুলো যেগুলো সিদ্ধ করা যেমন ডাল, চাল, খিচুরী এবং সমস্ত রকমের সবজি । অপরদিকে সুক্কা বলা হয় বিস্কিট, মিষ্টান্ন আর বিভিন্ন ধরনের পিঠা ।
.৯. জগন্নাথের জন্য যেসমস্ত ফল ও সবজি ব্যবহার করা হয় সেগুলো দু হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি ও ফলই জগন্নাথের জন্য ব্যবহৃত হয় । অন্য কোন অঞ্চল থেকে উৎপাদিত দ্রব্য জগন্নাথের জন্য ব্যবহার করা হয় না ।
.জগন্নাথ দেব আর লক্ষ্মী দেবীর কৃপায় ধন্য এই রান্না ঘর । তাইতো পুরীর এ রান্নাঘরকে অদ্ভুত রান্নাঘর বলেই অভিহিত করা হয় ।
পুরুষোত্তম ক্ষেত্র পুরীতে শ্রী জগন্নাথকে বলা হয় দারুব্রহ্ম । নিম কাঠের তৈরি এই বিগ্রহ কিছু বছর পরপর বদলে ফেলা হয় । নতুন নিম কাঠ দিয়ে তৈরি হয় নতুন দেহ বা কলেবর । ভারতে আর কোনো বিগ্রহের ক্ষেত্রে এমন রীতির কথা শোনা যায়না । কিন্তু পুরনো অবয়ব থেকে "ব্রহ্মবস্তু" নামে কোন একটি পদার্থ নতুন কলেবরে প্রতিষ্ঠাও করতে হয় । মনে করা হয় ওই বস্তুটিই নিম কাঠের তৈরি এই বিগ্রহের "প্রাণ" বা "আত্মা" । "ব্রহ্মবস্তু" ঠিক কী, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত । কেউ বলেন, সেটি বুদ্ধের দাঁত । কেউ বলেন, সেটি কৃষ্ণের দেহাবশেষ । কৃষ্ণ মারা গিয়েছিলেন এক শবরের তীরে - দ্বারকায় । তাঁর দেহাবশেষ ভাসতে ভাসতে আসে পূর্ব ভারতের সমুদ্রতীরে । পুরাণ মতে, সেখান থেকেই জন্ম নীলমাধবের । জগন্নাথ বিগ্রহের এই নতুন রূপ পাওয়ার বিশেষ উৎসবটির নাম "নবকলেবর" ।
পুরীর মন্দিরের প্রাচীন রীতি অনুসারে কৃষ্ণা চতুর্দশীর মধ্য রাতে সারা পুরীর সব আলো নিভিয়ে নিম কাঠের তৈরি নতুন বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা উচিত । নিশ্চিদ্র অন্ধকারে চার প্রবীণ দৈতাপতি পাণ্ডা চোখ বেঁধে পুরনো অবয়ব থেকে "ব্রহ্মবস্তু" নতুন কলেবরে প্রতিষ্ঠা করে । তাঁদের হাতে থাকে আবরণ যাতে ত্বকের স্পর্শ এড়ানো যায় । স্নানযাত্রার সময়ই বিগ্রহগুলিকে রত্নবেদী থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্নানবেদীতে । তারপর নিয়ে আসা হয় মন্দিরের গর্ভগৃহের সামনে অনসর পিন্ডিতে । ওখানেই জগন্নাথ,বলরাম, সুভদ্রার সেবা-পুজো করা হয় । মন্দিরের উত্তর দ্বার বা হস্তি দ্বারের কাছের "কৈলীবৈকুণ্ঠ" চত্বর থেকে সেখানেই নিয়ে আসা হয় নতুন বিগ্রহগুলি । তারপরেই অনসর পিন্ডিতেই নিকষ অন্ধকারের মধ্যেই পুরনো বিগ্রহটি থেকে নতুন বিগ্রহে "ব্রহ্মবস্তু" স্থানান্তরিত করা হয় ।
ব্রহ্মবস্তু স্থাপনের প্রক্রিয়া পূর্ণ করতে ১২ ঘন্টা মত সময় লাগে । ১৯৭৭ সালে রাত ১২টা থেকে পরের দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত সময় লেগেছিল । ১৯৯৬ সালে এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ভোর ৩টের সময়,শেষ হয় বিকেল ৩টেয় । এবার ভোর ৪টেয় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৫টায় । কিন্তু পুরোটাই হয়েছে অমাবস্যা তিথির মধ্যে
1.. কাঠের প্রলেপে প্রথমে পাটের প্রলেপ পড়ে ।
.২. তার উপরে ওসুয়ো বা এক ধরণের ধুনোবাটা মাখানো হয় ।
৩. নির্দিষ্ট দিনে খাঁটি তিলের তেলের সাথে মন্ত্রপূত জড়িবুটি ও জুই-বেল-চাপার মত সুগন্ধী ফুল মিশিয়ে তৈরি গন্ধতেল বা ফুলুরি তেল লেপণ করা হয় ।
.৪. শুক্লা নবমীতে নবকলেবরের শ্রীঅঙ্গে খড়িলাগি বা শ্বেত অঙ্গরাগ হয় ।
.৫. তারপরে সর্বাঙ্গে চন্দন লেপণ হয় । এক-একটি বিগ্রহের জন্য এক কুইন্টাল চন্দন লাগে
ব্রহ্মবস্তু স্থাপনের প্রক্রিয়া পূর্ণ করতে ১২ ঘন্টা মত সময় লাগে । ১৯৭৭ সালে রাত ১২টা থেকে পরের দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত সময় লেগেছিল । ১৯৯৬ সালে এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ভোর ৩টের সময়,শেষ হয় বিকেল ৩টেয় । এবার ভোর ৪টেয় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৫টায় । কিন্তু পুরোটাই হয়েছে অমাবস্যা তিথির মধ্যে ।
---------------------------------------------
১. পুরীর মন্দিরের মাথায় যে পতাকাটি ওড়ে সেটি প্রতিদিন বদলানো হয়, আর এটি বদলানোর জন্য একটি ১২বছরের ছেলে লাগে যে এই পতাকাটি প্রতিদিন বদলায় |
২. এই মন্দিরের কোনো ছায়া পরে না।
৩. মন্দিরের চূড়ার পতাকা বায়ুর উল্টো দিকে ওড়ে।
৪. মন্দিরের ওপর দিয়ে কোনো বিমান,পাখি উড়ে যেতে পারে না।
৫. মন্দিরের সিংহ দ্বারে সমূদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শোনা যায়।
৬. মহাপ্রসাদ রান্না হয় পরপর সাতটি মাটির পাত্রে একসাথে(একটির উপরে আরেকটি বসানো হয়) কিন্তু রান্না হয় উপরের হাঁড়িতে সবার প্রথমে।
৭. ভক্ত সংখ্যা কম বেশি হলেও প্রসাদের কম বেশি হয় না।কেউই অভুক্ত থাকেন না।
৮. এই মন্দিরের ভক্তরা খাওয়া দাওয়া করে জগন্নাথ দেবের পূজা করে।
৯. জগন্নাথ দেবের একটা হাঁড়ির ভোগ যদি আপনারা সপরিবারে খান তবুও এইভোগ শেষ করতে পারবেননা সে যতই ছোটো ভগের হাঁড়ি হোকনা কেনো।
১০. মন্দিরের রান্নাঘরের ভিতর দিয়ে গঙ্গানদী প্রবাহমান,যা বাইরে থেকে দেখা যায় না।
--------------------------------------------
১. চৈত্রের শুক্লপক্ষের দশমীতে নবকলেবর উৎসবের শুরু ।
.২. পুরী থেকে কিছু দূরে কাকটপুরে মঙ্গলাদেবীর মন্দিরের কাছ থেকে দৈতাপতিরা নতুন বিগ্রহগুলির কাঠের জন্য নতুন গাছের সন্ধানে বেরোন ।
.৩. গাছগুলিতে কোনো পাখির বাসা থাকা চলবে না ।
.৪. গাছগুলির মূলে বিষধর সাপের বাসা থাকতে হবে ।
.৫. গাছগুলিতে শঙ্খ,চক্র,গদা এবং পদ্মের চিহ্ণ থাকতে হবে ।
.৬. তিন,পাঁচ বা সাতটি করে শাখা থাকতে হবে ।
.৭. জগ্ননাথের বিগ্রহ তৈরি হবে কৃষ্ণবর্ণের কাঠ দিয়ে । বলরামের বিগ্রহ তৈরি হবে শ্বেতবর্ণের কাঠ দিয়ে । সুভদ্রার বিগ্রহ তৈরি হবে রক্তবর্ণের কাঠ দিয়ে ।
.৮. এইসব কাঠ কাঠের শকটেই পুরীতে আনা হয় । এই শকট কোন গাছের কাঠ থেকে তৈরি হবে, সেটাও নির্দিষ্ট রয়েছে ।পুরাণ মতে, সূর্য বংশের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন বিষ্ণুর দর্শন পেতে উদগ্রীব হলে এক সন্ন্যাসী তাকে নীলমাধব নামে এক দেবতার কথা বলেছিলেন । রাজার পুরোহিত বিদ্যাপতি শেষ পর্যন্ত বিশ্বাবসু নামে এক শবরের কাছে এসে সেই বিগ্রহের খবর পান । কিন্তু নীলমাধবকে দেখাতে বিশ্বাবসু রাজী ছিলেন না ।
.তবে বিশ্বাবসুর কন্যা ললিতা বিদ্যাপতির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করতে চাইলে বিশ্বাবসু রাজী হন । ললিতার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত বিদ্যাপতির চোখ বেঁধে তিনি একদিন জঙ্গলের মধ্যে নীলমাধবের সামনে নিয়ে যান । কিন্তু পুরা-কথামতে,নীলমাধবের মূর্তি যিনি দর্শন করবেন, যম তাকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। বিদ্যাপতির কাছ থেকে খবর পেয়ে অবন্তীরাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে মূর্তি দর্শন করতে আসতে চাইলে বিগ্রহটি অর্ন্তহিত হয়ে যায় ।
.ইন্দ্রদ্যুম্ন দুঃখে আত্মহত্যা করতে গেলে আকাশবাণীতে তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, বিষ্ণুর দারুব্রহ্ম মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে । বাঙ্কি মুহান নামে সমুদ্রের উপরে একটি জায়গায় স্বপ্নাদেশে তিনি সেই কাঠের সন্ধান পান । অনেকে ব্যর্থ হওয়ার পর মূর্তি তৈরি করতে আসে অনন্ত মহারাণা নামে এক বৃদ্ধ । ২১ দিন ধরে মন্দিরের দরজা বন্ধ রেখে জগন্নাথের কলেবর বা দেহ তৈরি করবেন বলে কথা দেন । তিনি বলেছিলেন, এর মধ্যে যেন দরজা না খোলা হয় ।
.কিন্তু ১৫ দিন পড়ে উদগ্রীব রাজা দরজা খুলে ফেলে দেখেন,বৃদ্ধ নেই । মূর্তিগুলোও অসম্পুর্ণ । তাঁদের হাত-পা প্রকট নয় । আঙুল দেখা যায় না । সেই রুপেই জগন্নাথদেব পতিতপাবন হয়ে এই মন্দিরে বিরাজ করেন ।
----------------------------------------------
3>১. পুরাণ মতে, ৫১টি সতীপীঠ এর মধ্যে একটি সতীপীঠ জগন্নাথ মন্দিরে আছে যার নাম বিমলা দেবী । মন্দির তাঁর সাম্রাজ্যেই চলে । সবার আগে দেবীর ভোগ চরানো হয় । তারপর জগ্ননাথের ভোগ চরে ।
২. প্রতিদিন সন্ধ্যা ৫টার পর মন্দিরের পূর্বদিকের প্রস্থান পথ বন্ধ করে দেওয়া হয় । কথিত আছে,প্রতিদিন ওই সময়ে স্বর্গরাজ্য থেকে দেব-দেবীরা এসে ওখানে চলাফেরা করে। কেউ যদি ওখানে যায় তবে মুহূর্তের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে যায় ।
৩. বলা হয়,জগন্নাথ মন্দিরের উপরে যতটা মন্দির আছে,মাটির নীচেও ততটাই আছে । আজ অবধি কেউ দেখা পায়নি মাটির নীচের মন্দিরের ।
৪. এটি একমাত্র মন্দির যেখানে হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেব-দেবীর বাসস্থান ।
৫. কথিত আছে,৪টে শর্ত মিলে গেলে মাটির নীচের মন্দিরের দেখা পাওয়া যাবে ।
-----------------------------------------
শর্ত ৪টে হল নিম্নরপ =>
১. ধ্বজার উপর বাজপাখী এসে বসবে যেটা বসতে দেখা গেছে ।
২. জগন্নাথের মুকুট মাটিতে পড়ে যাবে যেটা ভূমিকম্পের সময় মাথা থেকে পড়ে গেছে ।
৩. জগন্নাথের মাথায় রক্ত এসে লাগবে । মন্দিরের মূল পাণ্ডারা মারপিট করার সময় তাঁদের মাথার রক্ত জগন্নাথের মাথায় এসে লাগে ।
৪. যেদিন সমুদ্রের জল এসে মন্দিরের প্রধান সিঁড়িকে ধুয়ে দেবে । এটা এখনো হয়নি ।
----------------------------------------
4>১. জগ্ননাথের রথের নাম নন্দিঘোষ । এই রথের সারথী দারুক । জগ্ননাথের রথের ঘোড়াগুলির নাম নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে । কাহ্নুচরণের মতে,ঘোড়াগুলির নাম শঙ্খিনী,রোষিকা,মোতিকা ও জ্বালিনী । অন্যমতটি হল শঙ্খ,বহ্লক,শ্বেত,হরিদাশ্ব । জগ্ননাথের ঘোড়াগুলির সবকটি সাদা ।
২. বলরামের রথের নাম তালধ্বজ । এই রথের সারথী মাতলি । কাহ্নুচরণের মতে,বলরামের রথের ঘোড়াগুলির নাম ঋক,সাম,যজু,অথর্ব ।
৩. সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন । এই রথের সারথী দেবদত্ত । কাহ্নুচরণের মতে,সুভদ্রার রথের ঘোড়াগুলির নাম শৈব্যা,সুগ্রীব,মেঘপুষ্প,বহ্লক ।
৪. জগ্ননাথের রথের ১৬টি চাকা,বলরামের রথের ১৪টি চাকা,সুভদ্রার রথের ১২টি চাকা ।
৫. নন্দিঘোষ চাকা থেকে ২৩ হাত উঁচু । তালধ্বজ ২২ হাত ও দর্পদলন ২১ হাত লম্বা ।
৬. সবকটি রথেরই দৈর্ঘ-প্রস্থ সমান । —
মন্দিরের পশ্চিম দিকের বাঘ দরজার কাছে কয়েকশো বছরের পুরনো ওড়িয়া মঠে প্রভুর গায়ের গন্ধতেল তৈরি হয় । খাঁটি তিলের তেলের সাথে মন্ত্রপূত জড়িবুটি ও জুই-বেল-চাপার মত সুগন্ধী ফুল মিশিয়ে এক বছর ধরে গোপনে এই তৈরি হয় । প্রতি বছর স্নানযাত্রায় ভিজে প্রভুর বাঁধাধরা জ্বর হয় । ম্যাজম্যাজে গায়ে তিনি একটু উঠে বসার পড়ে এই তেল মাখিয়ে দেন দৈতাপতিরা । রাতভর গুপ্তসেবায় দৈতাপতিরা মিলে অসুস্থ 'বড় ভাই'-এর হাত-পা টেপাটেপি করেন । পাখার হাওয়া বুলিয়ে তাকে ঘুম পাড়ান । অসুস্থ ঈশ্বর শুধু রাতে দু'বার সর-রাবড়ি-আম-পাকা কাঁঠাল খান । বিপুল ভোগ প্রভুকে খাইয়ে দৈতাপতিরা যতটা পারবেন,খাবেন । সেই খাবার গুপ্তসেবার স্থান থেকে বার করা বা কাউকে বিতরণ করা নিষেধ ।
--------------------------------
5>১. প্রতিদিন অর্জুন জগন্নাথদেবের সাথে দেখা করতে আসতেন । তাই প্রতিদিন ভোরবেলা মন্দিরের প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়া হয় । প্রমাণ হিসেবে অর্জুন-এর জুতোর সোনালী খুর পাওয়া গেছে ।
.২. মন্দিরের কোনো এক দেওয়ালে কুকুরকে প্রহরী হিসেবে পূজা দেওয়া হয় ।বলা হয় মন্দিরে কিছু চুরি হলে ওই দানবাকৃতি কুকুরকে মন্দিরে ঘুরতে দেখা যায় । কিন্তু এই পর্যন্ত জানা যায়নি ওই কুকুর কোথায় থাকে ।
.৩. জগন্নাথদেবের মন্দিরের পাশে বিমলা দেবী এবং লক্ষ্মীদেবীর মন্দিরের পিছনে দেখা যায় দেবী কালীর মন্দির ।
.৪. মন্দিরের প্রথম দরজায় একটি লোহার পদচিহ্ন দেখা যায় । মন্দিরে প্রবেশের সময় ওই পদচিহ্নে পা ফেলে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয় । বেরিয়ে আসার সময় ওই পদচিহ্ন পাশ কাটিয়ে আসতে হয় ।
.৫. মনের অন্তর থেকে চোখে জল এনে ১০৮বার জগন্নাথদেবের নাম নিয়ে মন্দিরের গর্ভগৃহের বেদীর চারপাশে ৭বার প্রদক্ষিণ করলে ৭ জন্মের পাপ ধুয়ে যায় ।—
-------------------------------------------------------------------.
6> - আরও নানা বিচীত্র খবর -----
১) ‘অবধা’ অর্থাৎ ভগবান জগন্নাথদেবের অদ্ভুদ প্রসাদের নাম যে কেউ তৈরি করে না । নিজে নিজেই এই সুস্বাদু-কৃষ্ণ প্রসাদ তৈরি হয় । সবচেয়ে অবিশ্বাস্য যে, বিশাল আকৃতির চুল্লীতে একটির পর একটি বসানো মাটির তৈরি পাত্রে সব উপাদান দিয়ে বসিয়ে দিলে সবচেয়ে উপরের পাত্রটি প্রথমে তৈরি হয়ে যায় । অথচ প্রথা অনুযায়ী বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে নিচের পাত্রটিই আগুনের তাপে প্রথম তৈরি হওয়ার কথা । যা পুরী মন্দিরের অবিশ্বাস্য এক প্রাত্যাহিক ঘটনা । বলা হয় যে, এ প্রসাদ্গুলো স্বয়ং মহালক্ষ্মী রান্না করেন ।
২) অনেকেই হয়ত জানেন জগন্নাথ পুরীর মন্দিরটি পুরাটাই মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন তৈরি করেছেন । কিন্তু সেই জানার মধ্যে ভুল আছে । প্রকৃতপক্ষে মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন শুধু মূল মন্দিরটিই তৈরি করেছিলেন । পুরীর বাকি যেসব অবকাঠামো রয়েছে যেমন মেঘানন্দ পাচেরী, মুখ্য শালা, নাটমন্ডপ এবং অন্যান্য অবকাঠামো বা মন্দিরগুলো তৈরি করেছিল সময়ের আবর্তনে আগত বিভিন্ন রাজা এবং শাসকরা ।
৩) গর্ভ মুর, হল পুরী মন্দিরের সবচেয়ে অদ্ভুদ অংশ যেখানে ভগবানের সবরকমের মূল্যবান অলংকারসমূহ সংরক্ষণ রাখা হয় । এগুলো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য যারা নিয়োজিত তারা হল কতগুলো বিষধর অদ্ভূত সাপ এবং স্বর্গীয় আত্মা ।
৪) অপরদিকে রত্ন মুর নামে মন্দিরে উপরের অংশটিতে একটি অদ্ভূত বৃহৎ চুম্বক শক্তি রয়েছে । যেটি মন্দিরকে ঝড়ো বা প্রবল দমকা হাওয়ার স্থির রাখতে বা কোন ধ্বংস হওয়া থেকে অদ্ভূতভাবে সুরক্ষা করে । বলা হয়ে থাকে যে, মাঝে মাঝে ঐ অংশে তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তির বিশেষ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় । যা সত্যিই অদ্ভূত ।
৫) আপনি কি জানেন, রথযাত্রার সময় জগন্নাথ, বলদেব এবং সুভদ্রা দেবী যখন রথে আরোহন করে তখন সুদর্শন কোথায় অবস্থান করেন? অনেকেই বলবে জগন্নাথদেবের পাশে কিন্তু অদ্ভূত হলেও সত্য সুদর্শন জগন্নাথের পাশে না বরঞ্চ সুভদ্রা দেবীর পাশে অবস্থান করেন । তখন জগন্নাথের পাশে ‘মদনমোহন’ বিগ্রহ এবং বলদেবের দু’পাশে ‘রামচন্দ্র’ এবং ‘কৃষ্ণ’ এ দুটি পিতলের বিগ্রহ অবস্থান করেন ।
৬) জগন্নাথের সম্মুখে নৃত্য প্রদর্শনের জন্য একদল সেবিকা রয়েছে যাদেরকে দেবদাসী নামে অভিহিত করা হয় । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এসব সেবিকারদের ৯ বছর বয়সেই বিয়ে হয় স্বয়ং জগন্নাথের বিগ্রহের সঙ্গে । এরা নিজেদেরকে ভগবানের কাছে উৎসর্গ করে শুধুমাত্র এ নির্দিষ্ট সেবা নৃত্য প্রদর্শন করে । এ প্রথা স্বয়ং জগন্নাথদেবেরই নির্দেশে প্রচলিত । এক্ষেত্রে এর পিছনে একটি প্রাচীন সুন্দর কাহিনী রয়েছে । প্রতিদিন এসব দেবদাসী কিছু বিশেষ বিশেষ সময়ে ভগবানের সামনে তাদের নৃত্য প্রদর্শন করে থাকে । নৃত্য প্রদর্শনের সময় তারা দর্শকদের দিকে তাকাবে না । তাদের সকল মনোযোগ ভগবানকে কেন্দ্র করে । তাদের জন্য পুরুষ সঙ্গ নিষিদ্ধ ।
--------------------------------------------------------------------------
7>ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী মাহেশের রথযাত্রা...।
মাহেশের রথের বিবরণ :-
উচ্চতা - ৫০ ফুট
ওজন - ১২৫ টন
তলা - ৪টি
চূড়া - ৯টি (আটটি ছোট, একটি প্রধান)
চাকা - ১২টি
চাকার বেড় - ১ফুট (প্রতিটি)
প্রথম তলায় - শ্রীচৈতন্যলীলা
দ্বিতীয় তলায় - শ্রীকৃষ্ণলীলা
তৃতীয় তলায় - শ্রীরামলীলা
চতুর্থ তলায় - শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের সিংহাসন
চোখ আঁকা আছে - ৯৬ জোড়া
দড়ি - ২টি
দড়ির পরিধি - ১০ ইঞ্চি
দড়ির দৈর্ঘ্য - ১০০ গজ (প্রতিটি)
ব্রেক হিসাবে ৫০ ফুট লম্বা কাঠের বীম ব্যবহার হয়
চালকদণ্ড নাই বলিয়া চাকার তলায় থান ইট ব্যবহার করিয়া রথ বাঁকানো হয়
আশ্ব - ২টি (একটি নীল ও একটি সাদা)
সারথি - ১টি
রাজহংস - ২টি —
---------------------------------------------
8>দোল-দুর্গোৎসবের মত কলকাতার বনেদি বাড়িতে রথ নিয়েও নানা আচার-অনুষ্ঠান হয় । সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের রথযাত্রা তার মধ্যে অন্যতম।
.দর্জিপাড়ার রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়িতে প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে কুলদেবতা রাজরাজেশ্বরের রথযাত্রা হয়ে আসছে । বাড়ির সকলে এই দিন তিনবার রথকে প্রদক্ষিণ করেন এবং চামর দিয়ে বাতাস করেন । পুজোয় করবী ফুল দিয়ে হোম করা হয় এবং হরির লুঠ দেওয়া হয় । রথের আরেক ঐতিহ্য ইলিশবরণ । নোড়ার উপর জোড়া ইলিশ রেখে ছোট মাছটির মাথায় সিঁদুর দেওয়া হয় । পরে ধান,দূর্বা ও জল দিয়ে মাছ দুটিকে বরণ করা হয় ।
=====================================
9>জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা
জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা,তাই ঘুম থেকে উঠার পর একটু আগে টিভিতে সেটি নিয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠান দেখলাম।তারপর একটি কথা মনে পড়ে গেলো।আমরা হিন্দুরা আসলে কতটাই বা জানি আমাদের ধর্ম সম্পর্কে! গেলো দোল পুর্ণিমায় একজন বিদেশী নিয়ে যখন বিভিন্ন মন্দির দর্শনে বের হই তখন তাকে শুধু আমি কেন অনেকেই সঠিক উত্তর দিতে পারিনি, কেন এই দোল পূর্ণিমা এবং এ জাতীয় প্রশ্ন।তখন বেশ খারাপই লেগেছিলো।সেই সময় আমার সাথে ছিলো সিওপিসি এর বেশ কজন সদস্য,এখানে উল্লেক্ষ্য যে শুধু আমি একজনই হিন্দু ছিলাম বাকী সকলেই ইসলাম ধর্মালম্বী ও দুইজন খ্রিস্টান ধর্মালম্বী কিন্তু সবথেকে অবাকের বিষয় তাদের আগ্রহ ও সৌহার্দ্য আমাকে অনেক বেশী অভিভূত করেছিলো।এখন সেই বিদেশী উইলিয়াম স্যার আবার ধরেছেন আজ ২১ তারিখ রথযাত্রায় তাকে সাথে করে নিয়ে ঘুরতে,এবার তো আর না জেনে থাকার উপায় নেই গতবার যা লজ্জা পেয়েছি সে থেকেই যা যা পেয়েছি তা জেনেছি এবং ভালো করে মনে রাখার জন্য এবং অন্যান্যদের জানার জন্য এটি শেয়ার করলাম।
জগন্নাথ:- হিন্দু দেবতাদের মাঝে অন্যতম জগন্নাথ দেব; ইনি ভগবান শ্রী কৃষ্ণের একটি বিশেষ রূপ। জগন্নাথ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ জগৎ+নাথ=জগতের নাথ বা প্রভু।
পৌরাণিক উপাখ্যান
.৭. কেউ কেউ সব্জি ধৌত করছে আর কেউ কেউ সব্জি কাটছে আর কেউ মসলা তৈরি করছে । রান্নাঘরে যে সেবকরা থাকে তাদের বয়স যখন ১২ বছর হয় তখন থেকে তারা ট্রেনিং এ নেমে পড়ে এভাবে তারা বংশানুক্রমে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট সেবা সারাজীবন ধরে অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত করে থাকে ।
.৮. এই রান্নাঘরে ১০০টির উপর আইটেম রান্না করা হয় যা দুটি ভাগে বিভক্ত । এ দুটি ভাগকে পাক্কা এবং সুক্কা নামে ডাকা হয় । পাক্কা বলা হয় সে খাবারগুলো যেগুলো সিদ্ধ করা যেমন ডাল, চাল, খিচুরী এবং সমস্ত রকমের সবজি । অপরদিকে সুক্কা বলা হয় বিস্কিট, মিষ্টান্ন আর বিভিন্ন ধরনের পিঠা ।
.৯. জগন্নাথের জন্য যেসমস্ত ফল ও সবজি ব্যবহার করা হয় সেগুলো দু হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি ও ফলই জগন্নাথের জন্য ব্যবহৃত হয় । অন্য কোন অঞ্চল থেকে উৎপাদিত দ্রব্য জগন্নাথের জন্য ব্যবহার করা হয় না ।
.জগন্নাথ দেব আর লক্ষ্মী দেবীর কৃপায় ধন্য এই রান্না ঘর । তাইতো পুরীর এ রান্নাঘরকে অদ্ভুত রান্নাঘর বলেই অভিহিত করা হয় ।
পুরুষোত্তম ক্ষেত্র পুরীতে শ্রী জগন্নাথকে বলা হয় দারুব্রহ্ম । নিম কাঠের তৈরি এই বিগ্রহ কিছু বছর পরপর বদলে ফেলা হয় । নতুন নিম কাঠ দিয়ে তৈরি হয় নতুন দেহ বা কলেবর । ভারতে আর কোনো বিগ্রহের ক্ষেত্রে এমন রীতির কথা শোনা যায়না । কিন্তু পুরনো অবয়ব থেকে "ব্রহ্মবস্তু" নামে কোন একটি পদার্থ নতুন কলেবরে প্রতিষ্ঠাও করতে হয় । মনে করা হয় ওই বস্তুটিই নিম কাঠের তৈরি এই বিগ্রহের "প্রাণ" বা "আত্মা" । "ব্রহ্মবস্তু" ঠিক কী, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত । কেউ বলেন, সেটি বুদ্ধের দাঁত । কেউ বলেন, সেটি কৃষ্ণের দেহাবশেষ । কৃষ্ণ মারা গিয়েছিলেন এক শবরের তীরে - দ্বারকায় । তাঁর দেহাবশেষ ভাসতে ভাসতে আসে পূর্ব ভারতের সমুদ্রতীরে । পুরাণ মতে, সেখান থেকেই জন্ম নীলমাধবের । জগন্নাথ বিগ্রহের এই নতুন রূপ পাওয়ার বিশেষ উৎসবটির নাম "নবকলেবর" ।
পুরীর মন্দিরের প্রাচীন রীতি অনুসারে কৃষ্ণা চতুর্দশীর মধ্য রাতে সারা পুরীর সব আলো নিভিয়ে নিম কাঠের তৈরি নতুন বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা উচিত । নিশ্চিদ্র অন্ধকারে চার প্রবীণ দৈতাপতি পাণ্ডা চোখ বেঁধে পুরনো অবয়ব থেকে "ব্রহ্মবস্তু" নতুন কলেবরে প্রতিষ্ঠা করে । তাঁদের হাতে থাকে আবরণ যাতে ত্বকের স্পর্শ এড়ানো যায় । স্নানযাত্রার সময়ই বিগ্রহগুলিকে রত্নবেদী থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্নানবেদীতে । তারপর নিয়ে আসা হয় মন্দিরের গর্ভগৃহের সামনে অনসর পিন্ডিতে । ওখানেই জগন্নাথ,বলরাম, সুভদ্রার সেবা-পুজো করা হয় । মন্দিরের উত্তর দ্বার বা হস্তি দ্বারের কাছের "কৈলীবৈকুণ্ঠ" চত্বর থেকে সেখানেই নিয়ে আসা হয় নতুন বিগ্রহগুলি । তারপরেই অনসর পিন্ডিতেই নিকষ অন্ধকারের মধ্যেই পুরনো বিগ্রহটি থেকে নতুন বিগ্রহে "ব্রহ্মবস্তু" স্থানান্তরিত করা হয় ।
ব্রহ্মবস্তু স্থাপনের প্রক্রিয়া পূর্ণ করতে ১২ ঘন্টা মত সময় লাগে । ১৯৭৭ সালে রাত ১২টা থেকে পরের দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত সময় লেগেছিল । ১৯৯৬ সালে এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ভোর ৩টের সময়,শেষ হয় বিকেল ৩টেয় । এবার ভোর ৪টেয় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৫টায় । কিন্তু পুরোটাই হয়েছে অমাবস্যা তিথির মধ্যে
1.. কাঠের প্রলেপে প্রথমে পাটের প্রলেপ পড়ে ।
.২. তার উপরে ওসুয়ো বা এক ধরণের ধুনোবাটা মাখানো হয় ।
৩. নির্দিষ্ট দিনে খাঁটি তিলের তেলের সাথে মন্ত্রপূত জড়িবুটি ও জুই-বেল-চাপার মত সুগন্ধী ফুল মিশিয়ে তৈরি গন্ধতেল বা ফুলুরি তেল লেপণ করা হয় ।
.৪. শুক্লা নবমীতে নবকলেবরের শ্রীঅঙ্গে খড়িলাগি বা শ্বেত অঙ্গরাগ হয় ।
.৫. তারপরে সর্বাঙ্গে চন্দন লেপণ হয় । এক-একটি বিগ্রহের জন্য এক কুইন্টাল চন্দন লাগে
ব্রহ্মবস্তু স্থাপনের প্রক্রিয়া পূর্ণ করতে ১২ ঘন্টা মত সময় লাগে । ১৯৭৭ সালে রাত ১২টা থেকে পরের দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত সময় লেগেছিল । ১৯৯৬ সালে এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ভোর ৩টের সময়,শেষ হয় বিকেল ৩টেয় । এবার ভোর ৪টেয় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৫টায় । কিন্তু পুরোটাই হয়েছে অমাবস্যা তিথির মধ্যে ।
---------------------------------------------
১. পুরীর মন্দিরের মাথায় যে পতাকাটি ওড়ে সেটি প্রতিদিন বদলানো হয়, আর এটি বদলানোর জন্য একটি ১২বছরের ছেলে লাগে যে এই পতাকাটি প্রতিদিন বদলায় |
২. এই মন্দিরের কোনো ছায়া পরে না।
৩. মন্দিরের চূড়ার পতাকা বায়ুর উল্টো দিকে ওড়ে।
৪. মন্দিরের ওপর দিয়ে কোনো বিমান,পাখি উড়ে যেতে পারে না।
৫. মন্দিরের সিংহ দ্বারে সমূদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শোনা যায়।
৬. মহাপ্রসাদ রান্না হয় পরপর সাতটি মাটির পাত্রে একসাথে(একটির উপরে আরেকটি বসানো হয়) কিন্তু রান্না হয় উপরের হাঁড়িতে সবার প্রথমে।
৭. ভক্ত সংখ্যা কম বেশি হলেও প্রসাদের কম বেশি হয় না।কেউই অভুক্ত থাকেন না।
৮. এই মন্দিরের ভক্তরা খাওয়া দাওয়া করে জগন্নাথ দেবের পূজা করে।
৯. জগন্নাথ দেবের একটা হাঁড়ির ভোগ যদি আপনারা সপরিবারে খান তবুও এইভোগ শেষ করতে পারবেননা সে যতই ছোটো ভগের হাঁড়ি হোকনা কেনো।
১০. মন্দিরের রান্নাঘরের ভিতর দিয়ে গঙ্গানদী প্রবাহমান,যা বাইরে থেকে দেখা যায় না।
--------------------------------------------
১. চৈত্রের শুক্লপক্ষের দশমীতে নবকলেবর উৎসবের শুরু ।
.২. পুরী থেকে কিছু দূরে কাকটপুরে মঙ্গলাদেবীর মন্দিরের কাছ থেকে দৈতাপতিরা নতুন বিগ্রহগুলির কাঠের জন্য নতুন গাছের সন্ধানে বেরোন ।
.৩. গাছগুলিতে কোনো পাখির বাসা থাকা চলবে না ।
.৪. গাছগুলির মূলে বিষধর সাপের বাসা থাকতে হবে ।
.৫. গাছগুলিতে শঙ্খ,চক্র,গদা এবং পদ্মের চিহ্ণ থাকতে হবে ।
.৬. তিন,পাঁচ বা সাতটি করে শাখা থাকতে হবে ।
.৭. জগ্ননাথের বিগ্রহ তৈরি হবে কৃষ্ণবর্ণের কাঠ দিয়ে । বলরামের বিগ্রহ তৈরি হবে শ্বেতবর্ণের কাঠ দিয়ে । সুভদ্রার বিগ্রহ তৈরি হবে রক্তবর্ণের কাঠ দিয়ে ।
.৮. এইসব কাঠ কাঠের শকটেই পুরীতে আনা হয় । এই শকট কোন গাছের কাঠ থেকে তৈরি হবে, সেটাও নির্দিষ্ট রয়েছে ।পুরাণ মতে, সূর্য বংশের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন বিষ্ণুর দর্শন পেতে উদগ্রীব হলে এক সন্ন্যাসী তাকে নীলমাধব নামে এক দেবতার কথা বলেছিলেন । রাজার পুরোহিত বিদ্যাপতি শেষ পর্যন্ত বিশ্বাবসু নামে এক শবরের কাছে এসে সেই বিগ্রহের খবর পান । কিন্তু নীলমাধবকে দেখাতে বিশ্বাবসু রাজী ছিলেন না ।
.তবে বিশ্বাবসুর কন্যা ললিতা বিদ্যাপতির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করতে চাইলে বিশ্বাবসু রাজী হন । ললিতার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত বিদ্যাপতির চোখ বেঁধে তিনি একদিন জঙ্গলের মধ্যে নীলমাধবের সামনে নিয়ে যান । কিন্তু পুরা-কথামতে,নীলমাধবের মূর্তি যিনি দর্শন করবেন, যম তাকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। বিদ্যাপতির কাছ থেকে খবর পেয়ে অবন্তীরাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে মূর্তি দর্শন করতে আসতে চাইলে বিগ্রহটি অর্ন্তহিত হয়ে যায় ।
.ইন্দ্রদ্যুম্ন দুঃখে আত্মহত্যা করতে গেলে আকাশবাণীতে তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, বিষ্ণুর দারুব্রহ্ম মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে । বাঙ্কি মুহান নামে সমুদ্রের উপরে একটি জায়গায় স্বপ্নাদেশে তিনি সেই কাঠের সন্ধান পান । অনেকে ব্যর্থ হওয়ার পর মূর্তি তৈরি করতে আসে অনন্ত মহারাণা নামে এক বৃদ্ধ । ২১ দিন ধরে মন্দিরের দরজা বন্ধ রেখে জগন্নাথের কলেবর বা দেহ তৈরি করবেন বলে কথা দেন । তিনি বলেছিলেন, এর মধ্যে যেন দরজা না খোলা হয় ।
.কিন্তু ১৫ দিন পড়ে উদগ্রীব রাজা দরজা খুলে ফেলে দেখেন,বৃদ্ধ নেই । মূর্তিগুলোও অসম্পুর্ণ । তাঁদের হাত-পা প্রকট নয় । আঙুল দেখা যায় না । সেই রুপেই জগন্নাথদেব পতিতপাবন হয়ে এই মন্দিরে বিরাজ করেন ।
----------------------------------------------
3>১. পুরাণ মতে, ৫১টি সতীপীঠ এর মধ্যে একটি সতীপীঠ জগন্নাথ মন্দিরে আছে যার নাম বিমলা দেবী । মন্দির তাঁর সাম্রাজ্যেই চলে । সবার আগে দেবীর ভোগ চরানো হয় । তারপর জগ্ননাথের ভোগ চরে ।
২. প্রতিদিন সন্ধ্যা ৫টার পর মন্দিরের পূর্বদিকের প্রস্থান পথ বন্ধ করে দেওয়া হয় । কথিত আছে,প্রতিদিন ওই সময়ে স্বর্গরাজ্য থেকে দেব-দেবীরা এসে ওখানে চলাফেরা করে। কেউ যদি ওখানে যায় তবে মুহূর্তের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে যায় ।
৩. বলা হয়,জগন্নাথ মন্দিরের উপরে যতটা মন্দির আছে,মাটির নীচেও ততটাই আছে । আজ অবধি কেউ দেখা পায়নি মাটির নীচের মন্দিরের ।
৪. এটি একমাত্র মন্দির যেখানে হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেব-দেবীর বাসস্থান ।
৫. কথিত আছে,৪টে শর্ত মিলে গেলে মাটির নীচের মন্দিরের দেখা পাওয়া যাবে ।
-----------------------------------------
শর্ত ৪টে হল নিম্নরপ =>
১. ধ্বজার উপর বাজপাখী এসে বসবে যেটা বসতে দেখা গেছে ।
২. জগন্নাথের মুকুট মাটিতে পড়ে যাবে যেটা ভূমিকম্পের সময় মাথা থেকে পড়ে গেছে ।
৩. জগন্নাথের মাথায় রক্ত এসে লাগবে । মন্দিরের মূল পাণ্ডারা মারপিট করার সময় তাঁদের মাথার রক্ত জগন্নাথের মাথায় এসে লাগে ।
৪. যেদিন সমুদ্রের জল এসে মন্দিরের প্রধান সিঁড়িকে ধুয়ে দেবে । এটা এখনো হয়নি ।
----------------------------------------
4>১. জগ্ননাথের রথের নাম নন্দিঘোষ । এই রথের সারথী দারুক । জগ্ননাথের রথের ঘোড়াগুলির নাম নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে । কাহ্নুচরণের মতে,ঘোড়াগুলির নাম শঙ্খিনী,রোষিকা,মোতিকা ও জ্বালিনী । অন্যমতটি হল শঙ্খ,বহ্লক,শ্বেত,হরিদাশ্ব । জগ্ননাথের ঘোড়াগুলির সবকটি সাদা ।
২. বলরামের রথের নাম তালধ্বজ । এই রথের সারথী মাতলি । কাহ্নুচরণের মতে,বলরামের রথের ঘোড়াগুলির নাম ঋক,সাম,যজু,অথর্ব ।
৩. সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন । এই রথের সারথী দেবদত্ত । কাহ্নুচরণের মতে,সুভদ্রার রথের ঘোড়াগুলির নাম শৈব্যা,সুগ্রীব,মেঘপুষ্প,বহ্লক ।
৪. জগ্ননাথের রথের ১৬টি চাকা,বলরামের রথের ১৪টি চাকা,সুভদ্রার রথের ১২টি চাকা ।
৫. নন্দিঘোষ চাকা থেকে ২৩ হাত উঁচু । তালধ্বজ ২২ হাত ও দর্পদলন ২১ হাত লম্বা ।
৬. সবকটি রথেরই দৈর্ঘ-প্রস্থ সমান । —
মন্দিরের পশ্চিম দিকের বাঘ দরজার কাছে কয়েকশো বছরের পুরনো ওড়িয়া মঠে প্রভুর গায়ের গন্ধতেল তৈরি হয় । খাঁটি তিলের তেলের সাথে মন্ত্রপূত জড়িবুটি ও জুই-বেল-চাপার মত সুগন্ধী ফুল মিশিয়ে এক বছর ধরে গোপনে এই তৈরি হয় । প্রতি বছর স্নানযাত্রায় ভিজে প্রভুর বাঁধাধরা জ্বর হয় । ম্যাজম্যাজে গায়ে তিনি একটু উঠে বসার পড়ে এই তেল মাখিয়ে দেন দৈতাপতিরা । রাতভর গুপ্তসেবায় দৈতাপতিরা মিলে অসুস্থ 'বড় ভাই'-এর হাত-পা টেপাটেপি করেন । পাখার হাওয়া বুলিয়ে তাকে ঘুম পাড়ান । অসুস্থ ঈশ্বর শুধু রাতে দু'বার সর-রাবড়ি-আম-পাকা কাঁঠাল খান । বিপুল ভোগ প্রভুকে খাইয়ে দৈতাপতিরা যতটা পারবেন,খাবেন । সেই খাবার গুপ্তসেবার স্থান থেকে বার করা বা কাউকে বিতরণ করা নিষেধ ।
--------------------------------
5>১. প্রতিদিন অর্জুন জগন্নাথদেবের সাথে দেখা করতে আসতেন । তাই প্রতিদিন ভোরবেলা মন্দিরের প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়া হয় । প্রমাণ হিসেবে অর্জুন-এর জুতোর সোনালী খুর পাওয়া গেছে ।
.২. মন্দিরের কোনো এক দেওয়ালে কুকুরকে প্রহরী হিসেবে পূজা দেওয়া হয় ।বলা হয় মন্দিরে কিছু চুরি হলে ওই দানবাকৃতি কুকুরকে মন্দিরে ঘুরতে দেখা যায় । কিন্তু এই পর্যন্ত জানা যায়নি ওই কুকুর কোথায় থাকে ।
.৩. জগন্নাথদেবের মন্দিরের পাশে বিমলা দেবী এবং লক্ষ্মীদেবীর মন্দিরের পিছনে দেখা যায় দেবী কালীর মন্দির ।
.৪. মন্দিরের প্রথম দরজায় একটি লোহার পদচিহ্ন দেখা যায় । মন্দিরে প্রবেশের সময় ওই পদচিহ্নে পা ফেলে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয় । বেরিয়ে আসার সময় ওই পদচিহ্ন পাশ কাটিয়ে আসতে হয় ।
.৫. মনের অন্তর থেকে চোখে জল এনে ১০৮বার জগন্নাথদেবের নাম নিয়ে মন্দিরের গর্ভগৃহের বেদীর চারপাশে ৭বার প্রদক্ষিণ করলে ৭ জন্মের পাপ ধুয়ে যায় ।—
-------------------------------------------------------------------.
6> - আরও নানা বিচীত্র খবর -----
১) ‘অবধা’ অর্থাৎ ভগবান জগন্নাথদেবের অদ্ভুদ প্রসাদের নাম যে কেউ তৈরি করে না । নিজে নিজেই এই সুস্বাদু-কৃষ্ণ প্রসাদ তৈরি হয় । সবচেয়ে অবিশ্বাস্য যে, বিশাল আকৃতির চুল্লীতে একটির পর একটি বসানো মাটির তৈরি পাত্রে সব উপাদান দিয়ে বসিয়ে দিলে সবচেয়ে উপরের পাত্রটি প্রথমে তৈরি হয়ে যায় । অথচ প্রথা অনুযায়ী বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে নিচের পাত্রটিই আগুনের তাপে প্রথম তৈরি হওয়ার কথা । যা পুরী মন্দিরের অবিশ্বাস্য এক প্রাত্যাহিক ঘটনা । বলা হয় যে, এ প্রসাদ্গুলো স্বয়ং মহালক্ষ্মী রান্না করেন ।
২) অনেকেই হয়ত জানেন জগন্নাথ পুরীর মন্দিরটি পুরাটাই মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন তৈরি করেছেন । কিন্তু সেই জানার মধ্যে ভুল আছে । প্রকৃতপক্ষে মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন শুধু মূল মন্দিরটিই তৈরি করেছিলেন । পুরীর বাকি যেসব অবকাঠামো রয়েছে যেমন মেঘানন্দ পাচেরী, মুখ্য শালা, নাটমন্ডপ এবং অন্যান্য অবকাঠামো বা মন্দিরগুলো তৈরি করেছিল সময়ের আবর্তনে আগত বিভিন্ন রাজা এবং শাসকরা ।
৩) গর্ভ মুর, হল পুরী মন্দিরের সবচেয়ে অদ্ভুদ অংশ যেখানে ভগবানের সবরকমের মূল্যবান অলংকারসমূহ সংরক্ষণ রাখা হয় । এগুলো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য যারা নিয়োজিত তারা হল কতগুলো বিষধর অদ্ভূত সাপ এবং স্বর্গীয় আত্মা ।
৪) অপরদিকে রত্ন মুর নামে মন্দিরে উপরের অংশটিতে একটি অদ্ভূত বৃহৎ চুম্বক শক্তি রয়েছে । যেটি মন্দিরকে ঝড়ো বা প্রবল দমকা হাওয়ার স্থির রাখতে বা কোন ধ্বংস হওয়া থেকে অদ্ভূতভাবে সুরক্ষা করে । বলা হয়ে থাকে যে, মাঝে মাঝে ঐ অংশে তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তির বিশেষ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় । যা সত্যিই অদ্ভূত ।
৫) আপনি কি জানেন, রথযাত্রার সময় জগন্নাথ, বলদেব এবং সুভদ্রা দেবী যখন রথে আরোহন করে তখন সুদর্শন কোথায় অবস্থান করেন? অনেকেই বলবে জগন্নাথদেবের পাশে কিন্তু অদ্ভূত হলেও সত্য সুদর্শন জগন্নাথের পাশে না বরঞ্চ সুভদ্রা দেবীর পাশে অবস্থান করেন । তখন জগন্নাথের পাশে ‘মদনমোহন’ বিগ্রহ এবং বলদেবের দু’পাশে ‘রামচন্দ্র’ এবং ‘কৃষ্ণ’ এ দুটি পিতলের বিগ্রহ অবস্থান করেন ।
৬) জগন্নাথের সম্মুখে নৃত্য প্রদর্শনের জন্য একদল সেবিকা রয়েছে যাদেরকে দেবদাসী নামে অভিহিত করা হয় । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এসব সেবিকারদের ৯ বছর বয়সেই বিয়ে হয় স্বয়ং জগন্নাথের বিগ্রহের সঙ্গে । এরা নিজেদেরকে ভগবানের কাছে উৎসর্গ করে শুধুমাত্র এ নির্দিষ্ট সেবা নৃত্য প্রদর্শন করে । এ প্রথা স্বয়ং জগন্নাথদেবেরই নির্দেশে প্রচলিত । এক্ষেত্রে এর পিছনে একটি প্রাচীন সুন্দর কাহিনী রয়েছে । প্রতিদিন এসব দেবদাসী কিছু বিশেষ বিশেষ সময়ে ভগবানের সামনে তাদের নৃত্য প্রদর্শন করে থাকে । নৃত্য প্রদর্শনের সময় তারা দর্শকদের দিকে তাকাবে না । তাদের সকল মনোযোগ ভগবানকে কেন্দ্র করে । তাদের জন্য পুরুষ সঙ্গ নিষিদ্ধ ।
--------------------------------------------------------------------------
7>ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী মাহেশের রথযাত্রা...।
মাহেশের রথের বিবরণ :-
উচ্চতা - ৫০ ফুট
ওজন - ১২৫ টন
তলা - ৪টি
চূড়া - ৯টি (আটটি ছোট, একটি প্রধান)
চাকা - ১২টি
চাকার বেড় - ১ফুট (প্রতিটি)
প্রথম তলায় - শ্রীচৈতন্যলীলা
দ্বিতীয় তলায় - শ্রীকৃষ্ণলীলা
তৃতীয় তলায় - শ্রীরামলীলা
চতুর্থ তলায় - শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের সিংহাসন
চোখ আঁকা আছে - ৯৬ জোড়া
দড়ি - ২টি
দড়ির পরিধি - ১০ ইঞ্চি
দড়ির দৈর্ঘ্য - ১০০ গজ (প্রতিটি)
ব্রেক হিসাবে ৫০ ফুট লম্বা কাঠের বীম ব্যবহার হয়
চালকদণ্ড নাই বলিয়া চাকার তলায় থান ইট ব্যবহার করিয়া রথ বাঁকানো হয়
আশ্ব - ২টি (একটি নীল ও একটি সাদা)
সারথি - ১টি
রাজহংস - ২টি —
---------------------------------------------
8>দোল-দুর্গোৎসবের মত কলকাতার বনেদি বাড়িতে রথ নিয়েও নানা আচার-অনুষ্ঠান হয় । সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের রথযাত্রা তার মধ্যে অন্যতম।
.দর্জিপাড়ার রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়িতে প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে কুলদেবতা রাজরাজেশ্বরের রথযাত্রা হয়ে আসছে । বাড়ির সকলে এই দিন তিনবার রথকে প্রদক্ষিণ করেন এবং চামর দিয়ে বাতাস করেন । পুজোয় করবী ফুল দিয়ে হোম করা হয় এবং হরির লুঠ দেওয়া হয় । রথের আরেক ঐতিহ্য ইলিশবরণ । নোড়ার উপর জোড়া ইলিশ রেখে ছোট মাছটির মাথায় সিঁদুর দেওয়া হয় । পরে ধান,দূর্বা ও জল দিয়ে মাছ দুটিকে বরণ করা হয় ।
=====================================
9>জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা
জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা,তাই ঘুম থেকে উঠার পর একটু আগে টিভিতে সেটি নিয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠান দেখলাম।তারপর একটি কথা মনে পড়ে গেলো।আমরা হিন্দুরা আসলে কতটাই বা জানি আমাদের ধর্ম সম্পর্কে! গেলো দোল পুর্ণিমায় একজন বিদেশী নিয়ে যখন বিভিন্ন মন্দির দর্শনে বের হই তখন তাকে শুধু আমি কেন অনেকেই সঠিক উত্তর দিতে পারিনি, কেন এই দোল পূর্ণিমা এবং এ জাতীয় প্রশ্ন।তখন বেশ খারাপই লেগেছিলো।সেই সময় আমার সাথে ছিলো সিওপিসি এর বেশ কজন সদস্য,এখানে উল্লেক্ষ্য যে শুধু আমি একজনই হিন্দু ছিলাম বাকী সকলেই ইসলাম ধর্মালম্বী ও দুইজন খ্রিস্টান ধর্মালম্বী কিন্তু সবথেকে অবাকের বিষয় তাদের আগ্রহ ও সৌহার্দ্য আমাকে অনেক বেশী অভিভূত করেছিলো।এখন সেই বিদেশী উইলিয়াম স্যার আবার ধরেছেন আজ ২১ তারিখ রথযাত্রায় তাকে সাথে করে নিয়ে ঘুরতে,এবার তো আর না জেনে থাকার উপায় নেই গতবার যা লজ্জা পেয়েছি সে থেকেই যা যা পেয়েছি তা জেনেছি এবং ভালো করে মনে রাখার জন্য এবং অন্যান্যদের জানার জন্য এটি শেয়ার করলাম।
জগন্নাথ:- হিন্দু দেবতাদের মাঝে অন্যতম জগন্নাথ দেব; ইনি ভগবান শ্রী কৃষ্ণের একটি বিশেষ রূপ। জগন্নাথ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ জগৎ+নাথ=জগতের নাথ বা প্রভু।
পৌরাণিক উপাখ্যান
জগন্নাথদেবকে কেন্দ্র করে দুটি জনপ্রিয় কাহিনি প্রচলিত আছে। প্রথম কাহিনি অনুসারে, কৃষ্ণ তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যন্মুর সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে তাঁর মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তিনির্মাণের জন্য রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকেন। তখন এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হন এবং মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন। সেই কাষ্ঠশিল্পী রাজাকে জানিয়ে দেন মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন তাঁর কাজে বাধা না দেন। বন্ধ দরজার আড়ালে শুরু হয় কাজ। রাজা ও রানি সহ সকলেই নির্মাণকাজের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন তাঁরা বন্ধ দরজার কাছে
যেতেন এবং শুনতে পেতেন ভিতর থেকে খোদাইয়ের আওয়াজ ভেসে আসছে। ৬-৭ দিন বাদে যখন রাজা বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন এমন সময় আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। অত্যুৎসাহী রানি কৌতুহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধসমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত। এই রহস্যময় কাষ্ঠশিল্পী ছিলেন দেবশিল্পী দিশ্বকর্মা। মূর্তির হস্তপদ নির্মিত হয়নি বলে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কাজে বাধাদানের জন্য অনুতাপ করতে থাকেন। তখন দেবর্ষি নারদ তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন। নারদ রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ।
দ্বিতীয় কাহিনিটির অবতারণা করা হয়েছিল পূর্বোল্লিখিত উপখ্যানটির ব্যাখ্যা ও সংশয় নিরসনের উদ্দেশ্যে। বৃন্দাবনে গোপীরা একদিন কৃষ্ণের লীলা ও তাঁদের কৃষ্ণপ্রীতির কথা আলোচনা করছিলেন। কৃষ্ণ গোপনে সেই সকল কথা আড়ি পেতে শুনছিলেন। কৃষ্ণভগিনী সুভদ্রা নিয়োগ করা হয়েছিল গোপীরা যখন কৃষ্ণের কথা আলোচনা করেন তখন কৃষ্ণ যেন তাঁদের নিকটবর্তী না হতে পারে সেদিকে নজর রাখার জন্য। কিন্তু গোপীদের কৃষ্ণপ্রীতি দেখে পরিতুষ্ট সুভদ্রা তাঁদেরই কথা শুনতে শুনতে বিমোহিত হয়ে গেলেন। দেখতে পেলেন না যে তাঁদের দুই দাদা কৃষ্ণ ও বলরাম এগিয়ে আসছেন। শুনতে শুনতে দুই ভাইয়ের কেশ খাড়া হয়ে উঠল, হাত গুটিয়ে এল, চোখদুটি বড় বড় হয়ে গেল এবং মুখে আনন্দের উচ্চ হাসির রেখা ফুটে উঠল। এই কারণেই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার এইপ্রকার রূপ।বৈষ্ণবেরা কৃষ্ণের এই বিমূর্ত রূপটিকে পূজা করেন।
==========================================
10> || দেহ রথ + শরীর রুপি রথ ||
1>দেহ রথ-----
<--আদ্যনাথ-->
প্রভু জগন্নাথ দেবের রথ
সত্যই মানব দেহের প্রতিরূপ।
প্রভুর রথে আছে কাঠ 206 টি,
মানব দেহে আছে হাড় 206 টি ।
রথের 16 টি চাকা/চক্র এ যেন
মানব দেহের পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়,
পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় সহ ষড় রিপুর প্রতীক।
সারথি দারুক যেন আমাদের বুদ্ধি
আর সেথায় রথী প্রভু জগন্নাথ
আমাদের আত্মা।
উল্টো রথের যাত্রা শেষে,
প্রভু জগন্নাথ রথ থেকে নেবে গেলে,
রথের সেই কাঠ করা হয় নষ্ট।
যেমন দেহ থেকে আত্মা চলে গেলে,
যেমন শরীরকে করা হয় নষ্ট।
কঠ উপনিষদেই তো আছে
জীবের দেহ রথ, জীবাত্মা রথী,
মন হচ্ছে রথের রশি আর বুদ্ধি সারথি।
অর্থাৎ আমাদের শরীর রথে
অবস্থিত আত্মাই রথের রথী,
সেই আত্মাকে নির্গুণ স্তরে পৌঁছাতে সারথি বুদ্ধি,
রশি মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে দশ ইন্দ্রিয় এবং ষড় রিপু গুলোকে।
তারপরে আত্মা দেহ ত্যাগ করলে,
শরীরকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মাধ্যমে নষ্ট করাই রীতি।
<--©➽-আদ্যনাথ রায় চৌধুরী--->
======================
2>শরীর রুপি রথ
আমাদের শরীর ও জগন্নাথ দেবের রথ
যেন একই সূত্রে গাঁথা।
অনেক দিন আগের কথা। সেকালে বাজশ্রবা নামে এক মুনি ছিলেন।
মুনি ছিলেন পরম ধাৰ্মিক
এবং যাগযজ্ঞপরায়ণ।
তার এক ছিলো পুত্র —নাম নচিকেতা।
বাজশ্রবা মুনিএকদিন এক যজ্ঞ করলেন,
সেই যজ্ঞে আমন্ত্রিত ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের গোদান করলেন, উপহার-উপঢৌকনে ভরিয়ে দিলেন দরিদ্র ব্রাহ্মণদের। ছোট্ট ছেলে নচিকেতা, দূরে দাঁড়িয়ে দেখলেন বাবা যে গোরুগুলো দান করলেন, সেগুলো মৃতবৎসা। সেগুলি কখনই
দুধ দেবে না। আর উপহার সামগ্রীর বেশির ভাগ টাই অকাজের। বাবার এহেন ভ্রষ্টাচারে, লজ্জিত নচিকেতা বাবাকে জিজ্ঞেসা করলেন “বাবা, তোমার এমন লোক-ঠকানো অকিঞ্চিৎকর দানের অর্থ”? ছোট মুখে বড় কথা, বাজশ্রবা চিৎকার করে বললেন ‘এবার তোমাকেও আমি যমের দক্ষিণ দুয়ারে পাঠাব’। সেটাই হবে আমার মহত্তম দান। মুখ থেকে কথা খসামাত্রই যমদূতেরা হাজির, তারা নচিকেতাকে জোড়করে টেনে নিয়ে গেল যমরাজের দরবারে।
এদিকে যমরাজ বিশেষ কাজে যম লোকের বাইরে। যমরাজ তিনদিন বাদে ফিরে ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর নচিকেতাকে এমন ভাবে দেখে তাকে নিয়ে আসার হেতু জানতে চাইলেন এবং মুগ্ধ হলেন ওইটুকু ছেলের ত্যাগ-তিতিক্ষায়।
ফুটফুটে নচিকেতাকে কোলে বসিয়ে যমরাজ ভূরিভোজনের ব্যবস্থা করলেন,এবং নচিকেতাকে তিনটি বর প্রদান করলেন।
প্রথম বরে নচিকেতা তাঁর বাবার বুদ্ধি বিভ্রমের প্রতিকার চাইলেন। যমরাজ বললেন তথাস্তু। দ্বিতীয় বরে, যজ্ঞে মোক্ষলাভের গোপন বীজমন্ত্র শিখতে চাইলেন নচিকেতা। সেটিও মঞ্জুর হল। যমরাজ আরও বললেন, তিনবার এই যজ্ঞ সমাপনে নচিকেতাকে আর জন্ম মৃত্যুর পাকেচক্রে আবর্তিত হতে হবে না। পরম ব্রহ্মের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে নচিকেতার। আর যজ্ঞটিও পরিচিত হবে ‘নচিকেতা যজ্ঞ’ নামে।
এবার তৃতীয় বরের পালা। নচিকেতা যমরাজের কাছে জানতে চাইলেন মৃত্যুর পর কী পরিণতি হয় মানুষের? গূঢ়, গোপনীয় তথ্য। যমরাজ বললেন, যে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেবতারাও জানেন না, হে নচিকেতা তুমি তার নাগাল পাবে কীভাবে? নাছোড় নচিকেতা। মরণের পরের সংবাদ তাঁর চাইই চাই। ভুলিয়ে-ভালিয়ে যমরাজ বিশাল রাজ্য, পরমাসুন্দরী অপ্সরা, বিপুল বৈভব, ক্ষমতা আর ঐশ্বর্যের লোভ দেখালেন। খেয়ে পরে সুখে শান্তিতে দিনগুজরানের প্রতিশ্রুতি দিলেন। নচিকেতা বললেন, সুখ শান্তি কতদিনের? যে মুহূর্তে আপনি ডাকবেন, পরনের সুতোটিও ছেড়ে আপনার শরণাগত হতে হবে। তাহলে বিত্ত-বৈভব-ইন্দ্রিয়সুখ তো ক্ষণিকের মায়া, মরীচিকা। অবশেষে যমরাজ বাধ্য হয়ে বললেন পথ দুটো: একটা ভোগের, দ্বিতীয়টা ত্যাগের। প্রথম পথের শেষে স্বাগতম জানাবে মৃত্যু।
দ্বিতীয়টি আত্মজ্ঞানের,
উত্তরণ-উন্মোচন-আত্মোপলব্ধির, অমরত্বের। নচিকেতা দ্বিতীয় পথটিকেই বাছলেন।
তখন যমরাজ তাঁকে রথের উপমা টেনে শরীর-মন-বুদ্ধি-অনুভূতি-জীবাত্মার স্বরূপ
বর্ননা করে বললেন--
“আত্মানং রথিনং বিদ্ধি শরীরংরথমেব তু।
/বুদ্ধিংতু সারথিং বিদ্ধি মনঃপ্রগ্রহমেব চ।।
/ ইন্দ্রিয়াণি হয়ানহুর্বিষয়াংস্তেষু গোচরান।
/আত্মেন্দ্রিয়মনোযুক্তং ভোক্তেত্যাহর্মনীষিণঃ”
(কঠোপনিষদ ১।৩। ৩-৪)।
অর্থাৎ আত্মা রথী, শরীর নামক রথে আরূঢ় তিনি। রথের সারথি বুদ্ধি। মন হল লাগাম। আর ঘোড়া পঞ্চেন্দ্রিয়। মন, বুদ্ধি স্থির থাকলে শরীর রথ নিবাত-নিষ্কম্প। সাফল্য করায়ত্ত। কিন্তু মন-বুদ্ধি-হৃদয় বিপথগামী হলেই শরীর নামক রথও বিগড়বে। রথে জোতা অশ্বের বিশৃঙ্খল আচরণে প্রাণসংশয়ের সম্ভাবনা বাড়ে সারথি বা রথীর! রথী জীবাত্মা, সারথি পরমাত্মা। ঘোড়ারা ক্ষ্যাপামি করলে, সারথির পক্ষে রথের ভারসাম্য বজায় রেখে সঠিকপথে রথের পরিচালন অসম্ভব হয়ে পড়ে। শরীর রথের অন্দরে, হৃদয়ে সমাসীন জীবাত্মা, মন-বুদ্ধি তাকে পথ দেখিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষে পরমাত্মার সঙ্গে মিলিয়ে দেবে।
হৃদয়-মন-বুদ্ধির সামান্য বেচালে শরীর-রথ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পথভ্রষ্ট হয়। জন্ম-মৃত্যুর পঙ্কিল ঘূর্ণিপাকে কলুর বদলের মত নিশিদিন ঘুরপাক খেতে থাকে নশ্বর মনুষ্যজীবন। শোক-তাপ-জরা থেকে মেলে না মুক্তি। ষড়রিপু বা ইন্দ্রিয়কে চালনা করে মন, ইন্দ্রিয়ের থেকে বড় তাই মন, মনের থেকে বুদ্ধি। হৃদয়ের অন্তঃস্থলে আসীন আত্মা—‘পুরুষ’, অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারলে তবেই তার সঙ্গে মিলন হবে ‘প্রকৃতি’র। সেই ব্রাহ্মমুহূর্তে অপার্থিব আলোর ঝলকানিতে সৃজিত হবেন পরমাত্মা, পরমব্রহ্ম।
ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব বলছেন, ডাব নরম শাঁস আর জলে ভর্তি, জড় আর চেতন মিলেমিশে ঢ্যাবঢ্যাবে। ঝুনো নারকেল পরিপুষ্ট, পরিণত, খটখটে। খোসা থেকে সহজেই আলাদা করা যায়। মনকে শক্ত হাতে লাগাম পরাতে পারলেই জাগতিক কামনা বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে, ঝুনো নারকেল, ব্রক্ষ্মের স্বরূপে উপনীত হওয়া সম্ভব।
ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব দিনের মধ্যে ৩৬ বার সমাধিস্থ হতেন, ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার তাঁর নাড়ির হদিশ পেতেন না। আশ্চর্য হয়ে তিনি স্বগতোক্তি করেছিলেন পরমহংস ৩৬ বার মরছে আবার বেঁচেও উঠছে, কোন জাদুবলে? সমাধিকালে আত্মাকে নারকোলের মত শরীর নামক খোসা থেকে ছাড়িয়ে নিয়েই নাড়ির স্পন্দন বিরহিত হতেন রামকৃষ্ণদেব।
‘জীবনমুক্তিঃ সুখমপ্রাপ্তিঃ’।
চিকিৎসাশাস্ত্রে যার ব্যাখ্যা ডাঃ সরকার খুঁজে পাননি। সাধনমার্গের সাধকদের পক্ষেই এ মায়ার খেলা সম্ভব।
রথযাত্রা আসলে সফর/পথচলা।
ব্রক্ষ্মের সঙ্গে মিলনের বাহন রথ।
দক্ষিণ ভারতের রথোৎসবে তাই সাড়ম্বরে পালিত হয় ‘ব্রহ্মোৎসব’।
কিন্তু পুরীর রথে ব্রহ্মোৎসব অনুপস্থিত। মানুষের শরীর-রূপী রথে মোক্ষলাভের সমস্ত উপকরণই মজুত।
রথে আসীন শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব মানুষের মধ্যে নেমে এসে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন কীভাবে যাত্রার শেষে অভীষ্ট মোক্ষের পথে পৌঁছতে হবে!
তাই পুরীর রথযাত্রায় নেই কোনও ভেদাভেদ। নেই উচ্চ-নীচ, ধনী-নির্ধনের বিচার। মোক্ষের পথ, ধর্মাধর্ম ভেদে আলাদা হতে পারে না।
গজপতি রাজাকেও, আত্মসম্মার্জনার পথে, পুরীর রথে ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে হয়।
ভিন্নধর্মী আলেকজান্ডার ক্যানিংহ্যাম বা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর শ্রীমন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, পুরীর রথে স্বাগতম সকলেই।
সতেরশো শতাব্দীর ঘটনা। জাহাঙ্গিরের সুবেদার, ভক্ত কবি ‘সালাবেগ’ রথ-দর্শনে পরিত্রাহি ছোটার সময় পড়ে গিয়ে জখম হলেন। প্রভুর কাছে করুণ মিনতিতে বললেন দয়াপরবশ হয়ে প্রভু একটু যদি ‘সালাবেগের’ জন্য অপেক্ষা করেন। কী স্পর্ধিত আবদার! বড়া ডান্ডা অর্থাৎ মন্দিরের সামনের গ্র্যান্ড রোডে জগন্নাথদেবের ১৬ চাকার রথ ‘নন্দিঘোষ’ গেল আটকে, সারথির প্রাণপণ চেষ্টাতেও নড়ল না স্থাণুবৎ রথ।
আজও ‘বড়া ডান্ডায়’ রথের দিন সাময়িক আটকে থাকে রথ। ভিন্ন ধর্মের মানুষদের দর্শনাকাঙ্ক্ষা পূরণে সিংহদ্বারে জগৎপিতা সব ধর্মের মানুষকে পতিতপাবন-রূপে দিবারাত্র দর্শন দেন। ‘ব্রহ্মোৎসব’ পুরীর রথ লোকাচারে বেমানান, তাই বাতিল।
মানবশরীর যেমন পঞ্চভূতে গড়া, তার সমাপ্তিও তেমন পঞ্চভূতে বিলীন। শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীজগন্নাথদেবের রথও তেমন পঞ্চ উপাদানে তৈরি, কাঠ-ধাতু-রঙ-কাপড়-জরি। মন ও বুদ্ধি বা চেতনার যথোপযুক্ত প্রদর্শনে পুরীর রথে সারথি অর্জুন, আর মহাভারতের যুদ্ধে রথের রশি শ্রীকৃষ্ণের হাতে, রথী অর্জুন। মন, সাধারণ মানুষের বুদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে, বুদ্ধি মনকে নিয়ন্ত্রণ করলেই সাধনমার্গের দরজা খুলে যায়।
মানসিক চাপ হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করে, ধমনীতে চর্বি জমে, রক্তপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হার্ট অ্যাটাকের সূচনা হয়। ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধলে, মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাঁধা পায় ফলে অবশ্যম্ভাবী হয় ব্রেন স্ট্রোক।
মন-হৃদয়-মস্তিষ্ক একতারে বাঁধা। রথের রশি-অশ্ব-সারথির সন্ময় যুগলবন্দিতে সামান্য তাল কাটলে রথও যেমন বেসামাল, মানবশরীরও তাই।
<--©➽-আদ্যনাথ রায় চৌধুরী--->
====================