Friday, June 17, 2022

27> জগন্নাথদেবের "স্নান যাত্রা"র মহোৎসব। এবং আত্মারামের কৌটো" রহস্যঃ-----

 27>পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের "স্নান যাত্রা"র

 মহোৎসব। এবং আত্মারামের কৌটো" রহস্যঃ--------

জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীজগন্নাথদেবের বাৎসরিক স্নান যাত্রা মহোৎসব হয়।

স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তখন থেকে এই স্নান যাত্রা উৎসবের শুরু। স্নান যাত্রার দিনটিকে জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি হিসেবে পালন করা হয়। 

পান্ডারা বাইরের ভক্তদের বুঝিয়ে দেন যে স্নানযাত্রায় বেশি স্নান করানোর ফলে জগন্নাথ মহাপ্রভুর জ্বর হয়েছে। এই পনেরো দিন নিরোধন গৃহে বহু কর্মকাণ্ড হয়, যা সাধারণের কাছে 'গুপ্ত' বিষয়।

নিরোধন গৃহ বা আঁতুড় ঘরে নিয়ে গিয়ে শ্রীজগন্নাথদেবকে যখন পনেরো দিন রাখা হয় তখন কী করেন তিনি ? 

স্নান যাত্রার আগে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে সিল্কের কাপড় পরিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরি এক স্নান বেদীতে নিয়ে আসা হয়। পুরীর মন্দির বা জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনেই এই স্নান বেদী তৈরি করা হয়। এই বেদীকে বলা হয় স্নান বেদী। এটি এত উঁচু যে মন্দির প্রাঙ্গনের বাইরে থেকেও বেদীতে বসা বিগ্রহ সকল দেখতে পাওয়া যায়। বিগ্রহ ফুল দিয়ে সাজানো হয় ও ধুপ ধুনা অর্পণ করা হয়। স্নানের জন্য সোনার তৈরি কুয়া থেকে জল আনা হয়। জল আনার সময় পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন যাতে জলে কোন কিছু না পড়ে, এমনকি তাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস দ্বারাও যাতে জল দূষিত না হয়। ১০৮ টি স্বর্ণ পাত্র ভরা জল দিয়ে অভিষেক করা হয়। অভিষেকের সময় বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ, কীর্তন এবং শঙ্খ বাজানো হয়। তাঁদের দিব্যতনু বেয়ে সেই জল নেমে আসে। তারপর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের জ্বর হয়। জ্বর সারানোর জন্য পাচন খাওয়ানো হয়। আসলে জগন্নাথদেবের মানবলীলার এটি একটি রূপ।

রাজা ইন্দ্রদুম্নের প্রতি জগন্নাথদেবের আদেশ ছিল, এই মহাস্নানের পর পনেরো দিন শ্রীজগদীশকে অঙ্গরাগবিহীন বিরূপাবস্থায় কেউ যেন দর্শন করতে না পারে।

তাঁর আদেশানুসারে এই পনেরো দিন মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। এ সময়কে বলা হয় জগন্নাথদেবের অনবসরকাল। স্নান পূর্ণিমা থেকে উভা অমাবস্যা পর্যন্ত। শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের জগমোহনের পাশে তিনি এই এক পক্ষকাল অবস্থান করেন।

জয় শ্রীশ্রীজগন্নাথদেব ।।

আবার এই স্নান যাত্রাতে সাথে জুড়ে আছে "আত্মারামের কৌটো" এবং বেলুড় মঠে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা উৎসব।

"আত্মারামের কৌটো" রহস্যঃ

--------------------------------------------------

শ্রী শ্রী ঠাকুরের অস্থিভস্ম অল্প অল্প পরিমাণে বহু মঠে ছড়িয়ে আছে, যেমন বেলুড় মঠ, চেন্নাই মঠ, মুম্বাই, ভুবনেশ্বর, শিলং, কাশী, বৃন্দাবন, রাজকোট, জামতাড়া, কামারপুকুর, যোগোদ্যান, উদ্বোধন, জয়রামবাটী ইত্যাদি আশ্রমে। এছাড়াও ঢাকা ও সিঙ্গাপুরেও রয়েছে এই অস্থিভস্ম।

বেলুড় মঠে ঠাকুরের বেদীতে প্রোথিত আছে এর এক অংশ, অপরাংশ সযত্নে রক্ষিত থাকে আরেকটি বিশেষ জায়গায়, বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে (মূলত তিনদিন যেমন আজ স্নানযাত্রার দিন, দূর্গাপজোর অষ্টমীর দিন ও ঠাকুরের জন্মতিথির দিন) এটি মূল গর্ভগৃহে এনে পূজা করা হয়।

১৪-ই জানুয়ারী ১৯৩৮ সালে বেলুড়মঠে বর্তমান মন্দিরের নির্মানকার্য শেষ হলে বিজ্ঞানানন্দ মহারাজ নতুন মন্দিরে "আত্মারামের কৌটো" এনে প্রতিষ্ঠা করেন।।


জয় ঠাকুর জয় মা জয় স্বামীজী জয় গুরুদেব।

                  (সংগৃহীত)

       <--আদ্যনাথ রায় চৌধুরী-->

===========================

  জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রার অনেক কথাই জানি আমরা।

তবুও, অনেক জেনেও, কিছু রয়েজায় অজানা।

আজ সেই কিছু অজানাকে জানাতে লিখছি কিছু পুঁথি ঘেঁটে।

যেন না থাকে কোন  সংশয় মনের কোণে।


★জগন্নাথ কে...? ★স্নান যাত্রা কী...?

  আজ বলবো সেই কথা::-----

♥যে গৌর, সেই কৃষ্ণ, সেই জগন্নাথ।♥♥♥

 জয় বলো শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের জয় বলো।

ভগবান জগন্নাথদেব হলেন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং যিনি জগতের নাথ বা জগদীশ্বর। সংস্কৃতি ভাষায় জগত অর্থে বিশ্ব এবং নাথ অর্থে-ঈশ্বর বোঝায়। সুতরাং জগন্নাথ শব্দের অর্থ হলো জগতের ঈশ্বর বা জগদীশ্বর। 

স্কন্ধ পুরাণে রথযাত্রার মহিমা বর্ননা করে বলা হয়েছে- যিনি গুন্ডিচা মন্দিরে (জগন্নাথের মাসীর বাড়ী) ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে দর্শন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন, তিনি সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করেন।

স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করলেন তখন থেকে এই স্নান যাত্রার উৎসব শুরু। স্নান যাত্রার দিনটিকে জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি বা জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। স্নান যাত্রার আগের দিন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা দেবী এবং সুদর্শন দেবকে বেদী থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা স্নান বেদীতে নিয়ে আসা হয়। পুরীর মন্দির প্রাঙ্গনে বিশেষ ভাবে তৈরি করা এই মণ্ডপকে বলা হয় স্নান মণ্ডপ। এটা এত উঁচু যে মন্দির প্রাঙ্গনের বাইরে থেকেও বেদিতে উপবিষ্ট বিগ্রহ সমূহ অবলোকন করা যায়।

অনুষ্ঠানের দিন স্নান মণ্ডপকে ঐতিহ্যবাহী ফুল, বাগান ও গাছের চিত্রকল্প দ্বারা সজ্জিত করা হয়। তোরণ এবং পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়। জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এর পর বিগ্রহের উদ্দশ্যে ধুপ, ধুনা অর্পণ করা হয়।

পুরীতে স্নানের জন্য সোনার তৈরি এক ধরনের কুয়া থেকে জল আনা হয়। জল আনার সময় পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন যাতে জল তাদের মুখনিঃসৃত কোন কিছু দ্বারা এমনকি তাদের নিঃশ্বাস দ্বারা দূষিত না হয়।

স্নান মহোৎসবের পূর্বে জগন্নাথ,বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে সিল্কের কাপড় দ্বারা আবৃত করা হয় এবং তারপর লাল এক ধরনের পাউডার দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। ১০৮ টি স্বর্ণ পাত্র জল দ্বারা পূর্ণ থাকে। এই জল দ্বারা অভিষেক করা হয়। অভিষেকের সময় বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ, কীর্তন এবং শঙ্খ বাজানো হয়।

এরপর জগন্নাথ দেব এবং বলরাম দেবকে হাতি বেশে সাজানো হয়। এই সময় সুভদ্রা দেবীকে পদ্ম সাজে সাজানো হয়। স্নান যাত্রা উৎসবের পর ১৫ দিন ভগবানকে জনসাধারণ থেকে দূরে রাখা হয়। এই ১৫ দিন মন্দিরে কোন অনুষ্ঠান করা নিষেধ। এই সময় ভগবান জগন্নাথ , বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে রতন বেদী নামে এক বিশেষ বেদীতে রাখা হয়। এই সময়কে বলা হয় অনাবাসর কাল মানে পূজা করার জন্য অযোগ্য সময়। স্নান করানোর ফলে বিগ্রহ সমূহ বিবর্ণ হয়ে যায়। এই ১৫ দিনে জগন্নাথ দেবকে আগের সাজে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৬ তম দিনে জগন্নাথ দেবকে আবার সবার দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৬ তম দিন থেকেই রথ 

যাত্রা শুরু। ভগবান জগন্নাথ দেব তার ভক্তদের কৃপা করার জন্য রাজ পথে নেমে আসেন। প্রথা অনুযায়ী, স্নান যাত্রা সাঙ্গ হলে ওড়িশার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পুরোহিতরা জগন্নাথ এবং বলরামকে সাজিয়ে তোলেন গজানন বেশে বা হাতি বেশে, অর্থাৎ গণেশের রূপে। ফলে এ দিন জগন্নাথদেবকে একটি কালো হস্তীরূপে এবং বলভদ্রদেবকে একটি শ্বেত হস্তী রূপে চোখে পড়ে। যদিও সুভদ্রা হস্তীরূপ গ্রহণ করেন না, তিনি সেজে ওঠেন পদ্ম বেশে বা পদ্মের আকারে।

বলা হয়, একদা গণেশের ভক্ত গণপতি ভট্ট এই স্নান যাত্রার দিন এসেছিলেন পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে। কিন্তু জগন্নাথ দর্শন করে তিনি তৃপ্ত হননি। তাঁর মন জগন্নাথের মধ্যেও খুঁজে চলেছিল কেবল গণেশকেই। তাই অপ্রসন্ন চিত্তে তিনি যখন ফিরে চলেছেন, বলা হয়, স্বয়ং জগন্নাথ এক বৃদ্ধ পুরোহিতের বেশে তাঁর পথ রোধ করেন। এবং ভট্টকে অনুরোধ করেন আরেকটিবার চতুর্ধা মূর্তি দর্শনের। এ বার যখন ভট্ট মন্দিরে পা রাখেন, অবাক হয়ে আবিষ্কার করেন জগন্নাথকে গজানন বেশে। সেই কথা স্মরণে রেখেই প্রতি বছর স্নান যাত্রায় সেই থেকে জগন্নাথ এবং বলভদ্রকে সাজিয়ে তোলা হয় গজানন বেশে।

           (সংকলিত)

       <--আদ্যনাথ রায় চৌধুরী-->

=========================


No comments:

Post a Comment