Sunday, September 19, 2021

26> মার্কণ্ডেয় মুনি ও কল্পক্ষয় দর্শন::---

26> মার্কণ্ডেয় মুনি ও কল্পক্ষয় দর্শন::---

Diary- ভ্রমন-(29)  psge- (42)

মার্কণ্ডেয় মুনির সপ্তকল্প ক্ষয় দর্শন ও কীর্তন::---


পঞ্চপাণ্ডব গণ বনবাস কালে 

বিন্ধ্যপর্বত চূড়ায় অমরকণ্টকে, যেখানে আছে অতি সুন্দর কয়েকটি আশ্রম সংলগ্ন মনোরম স্থান।  

সেই নয়নমনোরম কাননে গমন পূর্বক ঐ স্থানের আশ্রমে তরুন অরুনকান্তি মুনি মার্কন্ডেয়ের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন।


ধর্মনন্দন রাজা যুধিষ্টির মার্কন্ডেয় মুনিকে

 জিজ্ঞাসা করেছিলেন  —  "হে বিপেন্দ্র ! 

আমি জানি যে সপ্তকল্প অবসান পর্যন্ত আপনার দীর্ঘায়ু। কল্পক্ষয় হইবার পর , সকল লোক , স্থাবর ও অস্থাবর সকল কিছুই বিনষ্ট হইয়া যায়। সাগরগামী গঙ্গাদি সকল নদীসমূহের মধ্যে কি কি বিনষ্ট হয় আর কোন কোন বস্তু বিদ্যমান থাকে ? কালক্ষয়ের পর আপনি কেমন করিয়া জীবিত থাকেন, আমার প্রতি সহৃদয় হইয়া সকল কিছু কীর্তণ করুণ।"


মার্কন্ডেয় মুনি বলেছিলেন — "হে  ধর্ম রাজ  যুধিষ্টির! তুমি মহাপ্রাঞ্জ। তবে এক্ষণে আমি যাহা বলিব তাহা বহুকাল যাবৎ রূদ্রতপস্যান্তে আমি স্বয়ং শঙ্কর হইতেই লব্ধ হইয়াছি। আমি যাহা বলিতেছি , এই পুরাণ শ্রবণ করিলে সুরাপায়ী, চৌর্যবৃত্তিপরায়ণ ও গোঘাতী মনুষ্য নিখিলমধ্যে কলুষমুক্ত হয়। হে নৃপসত্তম ! নদীনিবহ মধ্যে সরস্বতী , গঙ্গা , কাবেরী , দেবিকা , সিন্ধু , সালকুটী , সরযু , শতরূদ্রা , মহী , চর্ম্মিলা , গোদাবরী , যমুনা , পয়োষ্ণী , শতদ্রু — এই সকল নদীই শেষ্ঠা ও সর্ব্বপাপহরা কিন্তু কল্পক্ষয় কালে সমুদ্র ও নদীনিচয় সম্পূর্ণ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। একমাত্র ত্রিলোক বিখ্যাতা নর্মদা বিস্ময়কর এক মাহাত্ম্য লইয়া প্রতি কল্পে কল্পে নিরন্তর বিদ্যমান থাকে। "

                ধর্মরাজ বলেছিলেন— হে মহামুনে ! আপনি ব্যাতীত এই পৃথিবীতে অন্য কেহই কল্পক্ষয়কাল দর্শন করেন নাই। আপনি সহস্রচরণ সহস্রনয়ণ সহস্রউদর মধুরিপু পদ্মনাভকে একার্ণবে শয়ানে দর্শন করিয়াছেন। চরাচর জগত দাহ্যমান হইলেও তাঁহার অনুগ্রহে আপনিই একমাত্র প্রতি কল্পে কল্পে জীবিত থাকেন। সেই ক্ষয়কালে আপনি কি কি দর্শন করেন তাহা দয়া করিয়া আমাদের কাছে বর্ণনা করুণ।"     

মার্কন্ডেয় বলেছিলেন — "পুরাকালে ভগবান শঙ্কর বায়ুর নিকট এই মহাপুরাণ বর্ণনা করেন , স্কন্দ বায়ু সকাশে ইহা শ্রবণ করেন , স্কন্দ সমীপে বশিষ্ট ইহা বিদিত হন , বশিষ্ট হইতে পরাশর ও পরাশর হইতে জাতুকর্ণ ও পরিশেষে জাতুকর্ণ হইতে অন্য সকলে শ্রবণ ও কীর্ত্তণ করেন। তাহাই আমিও করিতেছি। 

        ★★★     স্বয়ং বিষ্ণুর প্রাসাদে সত্যই আমি বারংবার সপ্তকল্পের ভীষন ক্ষনকাল দর্শন করিয়াছি।★★★★

 যুগাবসানে ভীষন মহাকল্পক্ষয়কাল উপস্থিত হইল , তাহার শতাধিক বৎসর পূর্ব হইতেই ভয়ঙ্কর অনাবৃষ্টি , ওষধি সমূহ রসহীন , ত্রিলোক দেবদানব বিবর্জিত ! সরিৎ=(নদী) , সরোবর ও তড়াগে=(বর ও

গভীর পুকুরে) জল নাই । বন ও উপবন শুষ্ক হইয়া গেল , ত্রিলোক সর্ব্বশুন্য হইয়া নিরাকার ধারন করে। 

ইহার পর পরই ক্ষয়কাল উপস্থিত হইল ও দ্বাদশ আদিত্য উদিত হয়েও সমগ্র জগতকে দগ্ধ করিয়া ধরামন্ডলকে এক বৃহৎ একার্ণবে=(অর্ণব=সমুদ্র,সাগর) পরিণত করিল। 

                আমি বাহুদ্বারা সেই একার্ণবে সন্তরণ করিতে লাগিলাম। 

              সেই সলিলমধ্যে হঠাৎই আদিত্যরূপী দশদিক আলোকজ্জলে উদ্ভাসিত অনাদিনিধান★ পরম প্রভূকে দর্শন করিলাম। 

(অনাদি=আদিহীন,কারণহীন,উৎপত্তিহীন)

(নিধান=আধার, ভান্ডার,)

             আমার সহিত অন্য একটি মনু দৃষ্টিগোচর হইলেন যিনি চক্ররূঢ়ের ন্যায় তমোময় সেই জলধিমধ্যে অবিরাম সন্তরণ  করিতে লাগিলেন। আমিও সন্তরণপূর্ব্বক তথায় উপস্থিত হইয়া এক মহা উন্মত্ত মৎস দর্শন করিলাম।  

             সেই মহা উন্মত্ত মৎসরূপী পরম মহেশ্বর আমাকে বলিলেন — “ এস, আমার নিকট আগমন কর।” আমি কোনক্রমে তাঁহার মুখ গহ্বরে গমনপূর্ব্বক নির্ব্বোধ★ প্রাপ্ত হইলাম। 

(নির্বোধ=চেতনাহীন,অজ্ঞান,বুদ্ধিহীন)

              একার্ণবে আমি এক আবর্তসঙ্কুলা তরঙ্গায়িত শুভ্র ফেনারাশি বুকে নিয়ে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ মৎসসমূহ সমকলা এক কামগামিনী★ পূণ্যানদী সন্দর্শন করিলাম।  

             সেই নদীমধ্যে এক নীলোৎপল দলের ন্যায় শ্যাম দিব্য হাটকাদিতে

(হাটক=সোনা)

ভূষিত হইয়া মনোহারীনি রমনীকে সত্য সত্যই কনোকজ্জল★(কনক=সোনা) বলিয়া প্রতিয়মান হইল।

              ঐ রমনী এক বৃহৎ পোতে (পোত=নৌকা, জাহাজ)অবস্থিত। মনু তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল — 

              হে মনোহরাঙ্গি★(অতি সুন্দর অঙ্গ বিশেষ) ! তুমি কে ! কি পরিচয় তোমার ? সুর , অসুর , সরিৎ , সাগর , শৈল — সকল কিছুই বিনষ্ট হইয়াছে । তথাপি তুমি একাকিনী অবলীলাক্রমে এই তমসাকৃত একার্ণবে ভ্রমন করিতেছ ?


=======================


No comments:

Post a Comment