33>|| কৃষ্ণজন্মাষ্টমী /যোগমায়ার জন্মদিন মা বিন্ধ্যবাসিনী ||
জন্মাষ্টমী বা কৃষ্ণজন্মাষ্টমী, বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। এর অপর নাম কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী ইত্যাদি।
জন্মাষ্টমীতে পূজিত হয় কৃষ্ণের বালগোপাল মূর্তি।
২ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত পালনই করা হয়।
কোথাও দুই দিন কোথাও ৮ দিন পালন করা হয়।
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয় এই জন্মাষ্টমী ব্রত।
হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রে কংসের কারাগারে শ্রী কৃষ্ণের জন্ম হয়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পিতার নাম বসুদেব ও মাতার নাম দেবকী। শ্রীকৃষ্ণ পিতামাতার অষ্টম পুত্র।
ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জীবনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড (গান বা কীর্তন, গীতিনাট্য, নাট্য, যাত্রা ইত্যাদি) এর মাধ্যমে রাসলীলা, কংস বধ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড উপস্থাপন করা হয়। মথুরা, বৃন্দাবন, মণিপুর ইত্যাদি স্থানে এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত আড়ম্বরের সাথে করা হয়। রাস লীলায় কৃষ্ণের ছোট বয়সের কর্ম-কাণ্ড দেখানো হয়, অন্যদিকে, দহি হাণ্ডি প্রথায় কৃষ্ণের দুষ্টু স্বভাব প্রতিফলিত করা হয় যেখানে কয়েকজন শিশু মিলে উচ্চস্থানে বেঁধে রাখা মাখনের হাড়ি ভাঙতে চেষ্টা করে। এই পরম্পরাকে তামিলনাডুতে উরিয়াদি নামে পালন করা হয়।
কৃষ্ণের জন্ম হাওয়ায় নন্দরাজ সকলকে উপহার বিতরণ করেন এবং সেই কাহিনী উদ্যাপন করতে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পর বহু স্থানে নন্দোৎসব পালন করা হয়।
সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রে মথুরায় কংসের কারাগারে জন্ম নিয়েছেন বিষ্ণুর দশম অবতার, শ্রীকৃষ্ণ।
মথুরায় জন্মের পর শ্রী কৃষ্ণের পিতা
বসুদেব তাকে রেখে আসেন গোকূলে নন্দরাজের বাড়িতে। সেই থেকেই দিনটি পালন করা হয় জন্মাষ্টমী হিসেবে।
|| যোগমায়ার জন্মদিন ||
যোগমায়ার জন্মদিন। যোগমায়া, শ্রীকৃষ্ণের বোন। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা অষ্টমীর এক দুর্যোগময় রাতে গোকুলে জন্মেছিল একটি মেয়ে। এই কৃষ্ণা অষ্টমীর দিনেই। তার বাবার নাম নন্দ, মা যশোদা। সদ্যোজাত মেয়েটির মা প্রসব যন্ত্রণায় অচেতন। বাইরে প্রবল দুর্যোগ। আকাশ যেন ভেঙে পড়ছে পৃথিবীর বুকে!
তখনও হয়তো ঠিক মতন শিশুকন্যাটি দেখতে পায়নি মায়ের মুখ।
জন্মের কয়েক মূহুর্ত পরেই চিরকালের জন্য পরিবারহারা হয়েছিল সেই মেয়েটি।
সেই ছোট্ট মেয়েটি যোগমায়া।
ওদিকে ছেলেকে ঝুড়িতে করে মাথায় নিয়ে প্রবল বৃষ্টির রাতে ভরা যমুনা সাঁতরে পেরিয়ে বাসুদেব এলেন নদীর ওপারে গোপ পল্লীতে। নন্দ গোপের বাড়ি।
কোন এক অদৃশ্য শক্তিবলে নন্দের গোপ পল্লিতেও খোলা ছিল দরজা। গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিলেন আরেক সদ্য প্রসূতি, মা যশোদা সহ সকল পরিবার।
কোলের কাছে ঘুমোচ্ছিল শিশু কন্যা সন্তান। বসুদেব নিজের ছেলেটিকে যশোদার বুকের কাছে শুইয়ে দিয়ে যশোদা শিশুকন্যা টিকে তুলে নিলেন বাসুদেব।
তারপর আবার সবার অগোচরে দ্রুত নদী পেরিয়ে ফিরে এলেন কংসের কারাগারে। নিরাপদ হল সেই ক্ষুদ্র প্রাণ, ভবিষ্যতে যিনি হবেন মথুরার রাজা শ্রীকৃষ্ণ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।দেশজুড়ে পালিত হয় কৃষ্ণের জন্মোত্সব।
ওদিকে পরদিন সকালে শিশুরুপি যোগমায়াকে দেখেই কংস সেই সদ্যোজাত মেয়েটির দুই পা ধরে তাকে পাথরে আছাড় মারেন। এমন ই দুরাত্মা কংস।
যশোদার সন্তান হয়েছিল অপরাহ্নে। তাঁকে জানতেই দেওয়া হয়নি তার সন্তান পুত্র না কন্যা?
পরের দিন জ্ঞান ফিরলে যশোদা পরম আদরে কোলে টেনে নিলেন শিশু কৃষ্ণকে। স্তন্যদুগ্ধে পুষ্ট করলেন তাকে। চোখে হারাতেন তিনি তাঁর কানাইকে।
নন্দগোপ কিন্তু কোনো প্রকৃত গয়লা ছিলেন না। তিনি বসুদেবের পিতা যদুবংশীয় রাজা শূরসেনের সন্তান। তাঁকে গয়লা অধ্যুষিত গোকুলের সামন্তরাজা করা হয়। নন্দ তাই গয়লাদের রাজা ।বসুদেবের বৈমাত্রেয় ভাই। ভগবান কৃষ্ণের কাকা।
দেবকীদেবী কংসের নিজের বোন নন। কংসের পিতা উগ্রসেন যাদবদের নেতৃস্থানীয় ছিলেন। সেই উগ্রসেনের ভাই দেবকের কন্যা দেবকী।
এবারে আসা যাক ভগবৎ লীলার বাকি অংশে।
কারাগারের দেওয়ালে আছাড় মারতে চেয়ে দুই হাতে মেয়েটিকে তুলে ধরলেন নিষ্ঠুর দুরাত্মা কংস। সজোরে নিক্ষেপ করলেন পাথরে। কিন্তু তাকে মারবে সাধ্য কার! তৎক্ষণাৎ সেই কন্যা কংসের হাত থেকে মুক্ত হয়ে আকাশে উঠলো। আট হাতে ধারণ করল ধনুু, শূল, বাণ, চর্ম, অসি, শঙ্খ, চক্র, গদা! আবির্ভূতা হলেন আদ্যাশক্তি রূপে। কংসের উদ্দেশ্যে ভেসে এল আকাশবাণী-
"তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে!"
এরপর যোগমায়া বিন্ধ্য পর্বতে লোক কল্যাণের জন্য বিন্ধ্যবাসিনী রূপে অধিষ্ঠিতা হন।
জয় শ্রী কৃষ্ণ নারায়ন ।।
জয় মা যোগমায়া কালিকা।
ওঁ তৎসৎ।।
==========================
রাজা নন্দগোপ ছিলেন বসুদেবের পিতা যদুবংশীয় রাজা শূরসেনের সন্তান।
তাঁকে গয়লা অধ্যুষিত গোকুলের সামন্তরাজা করা হয়। নন্দ তাই গয়লাদের রাজা ।বসুদেবের বৈমাত্রেয় ভাই। ভগবান কৃষ্ণের কাকা।
দেবকীদেবী কংসের নিজের বোন ছিলেন না। কংসের পিতা উগ্রসেন ছিলেন যাদবদের নেতৃস্থানীয় । এই উগ্রসেনের ভাই দেবকের কন্যা দেবকী।
এই দেবকির সাথেই বসুদেবের বিবাহ হয়।
কিন্তু হঠাৎ নিষ্ঠুর দুরাত্মা কংস আকাশ বাণীতে শুনতে পায় যে এই দেবকির গর্ভ জাত সন্তানই তার মৃত্যুদূত রূপে জন্ম নেবে।
এমন ভয়ঙ্কর কথা জানতে পেরেই কংস দেবকি ও তার স্বামী বসুদেবকে কারাগারে নিক্ষেপ করে।
সেই কংসের কারাগারেই দেবকির অষ্টম গর্ভের সন্তান ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে।
<------আদ্যনাথ রায় চৌধুরী---->
06/09/2023
===========================
No comments:
Post a Comment